অনিয়মিত রেলের ওয়াগন চলাচল

সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে

দেবাশীষ দেবু, সিলেট

সিলেট বিভাগের চার জেলায় শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন জ্বালানি তেলের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। বিভাগের ১১৪টি পেট্রল পাম্পের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। সবকটি পাম্পে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। সিলেটে তেল সরবরাহ রেলের ওয়াগননির্ভর। ওয়াগন সংকটের কারণে এক সপ্তাহ ধরে বিভাগটিতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।

নিয়মিত ওয়াগন না আসায় ডিজেল অকটেনের সংকট তীব্র হয়েছে। অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই বিভাগের অধিকাংশ পেট্রল পাম্পই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জ্বালানি তেলের সংকট নিরসনে উদ্যোগ না নেয়া হলে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট বিভাগীয় কমিটি।

সিলেট বিভাগ পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় মোট ৭০টি পাম্প রয়েছে। এসব পাম্পে প্রতিদিন পেট্রল, অকটেন ডিজেলের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। তবে বর্ষা মৌসুমে চাহিদা অর্ধেকে নেমে যায়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় বিভাগের সব পেট্রল পাম্পই কম তেল নিয়ে চলছে। তবে সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে ডিজেলের। ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার অর্ধেকও ডিজেল পাচ্ছেন না তারা।

সংগঠনের নেতারা জানান, সিলেট বিভাগে শুষ্ক মৌসুমে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ে। সময়ে হাওরে বোরো আবাদ হয়। বোরোর সেচের জন্য ডিজেলের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে সিলেটের পাম্পগুলোতে পেট্রল, অকটেন ডিজেলের প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। তবে বর্ষা মৌসুমে চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে।

সূত্রটি জানায়, বিভাগের সবকটি পেট্রল পাম্পে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। স্বাভাবিক সময় প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে চার-পাঁচটি ওয়াগন সিলেটে আসে। এসব ওয়াগনে গড়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ লিটার জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। তবে এক সপ্তাহ ধরে বিভাগটিতে ওয়াগন আসছে অনিয়মিত। এতে জ্বালানি তেল সংকট তীব্র হয়। এছাড়া সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সঙ্গে প্রাপ্ত উপজাত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনও প্রায় ছয় মাস থেকে বন্ধ রয়েছে।

সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনের মাধ্যমে সিলেটে তেল আসে। নানা কারণে রেলের ওয়াগন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়া কোনো কোনো দিন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পাম্পে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায়, তা আগে সিলেটের বিভিন্ন প্লান্টেই জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হতো। সরকারি মালিকানাধীন প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি মালিকানাধীন প্লান্টে কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হয়। এতে এখানকার সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।

বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে ডিজেল সরবরাহ ওয়াগননির্ভর হওয়ায় আমাদের প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। সর্বোপরি সিলেটের গ্যাস ফিল্ডগুলোর খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন প্রায় ছয় মাস থেকে বন্ধ থাকায় সংকট কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি ব্যক্তিস্বার্থে সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর খনি থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। সমস্যা দ্রুত সমাধানসহ ছয় দফা দাবিতে আমরা গত ডিসেম্বরে পাম্পগুলোতে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছি। মার্চের ভেতরে সমস্যা সমাধান না করা হলে পেট্রল পাম্পগুলো অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেবে।

জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটের পাম্পগুলোতে নিম্নমানের তেল সরবরাহ করা হয়। আমাদের ছয়টি দাবির মধ্যে এটিও একটি। আগের মতো সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদিত তেল আমাদের দিতে হবে। সেই সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। আমাদের দাবিগুলো অনেক পুরনো। যদি মেনে না নেয়া হয়, তাহলে ২৮ মার্চের পর কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।

রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েলের সিলেট কার্যালয়ের ইনচার্জ বাকী বিল্লাহ বলেন, রেলের ওয়াগন অনিয়মিত হওয়ায় জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে একটি ওয়াগনে চার লাখ লিটার জ্বালানি তেল এসেছে। তবে নিয়মিত ওয়াগন না এলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে চাহিদামতো জ্বালানি না পেয়ে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন ট্যাংক-লরি শ্রমিকরা। সকালে যমুনা অয়েলের ডিপোর সামনে বিক্ষোভ করেন সিলেট বিভাগীয় ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা।

বিক্ষোভকারী লরি শ্রমিক আজিজ আহমদ বলেন, রেলপথে সিলেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি আসছে না। যে পরিমাণ আসে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি না আসায় আমাদের শ্রমিকরাও কষ্টে দিনযাপন করছেন। তাদের কাজ কমে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন