স্থানীয়ভাবে চিপ উৎপাদন

৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী বিভিন্ন শিল্পের মতো চিপ উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ল্যাপটপসহ নানা ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ছাড়াও আধুনিক গাড়ির অত্যাবশ্যকীয় চিপের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, যা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বুধবার চিপের বৈশ্বিক সংকট পর্যালোচনায় একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে চিপ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হাজার ৭০০ কোটি (৩৭ বিলিয়ন) ডলারের একটি সহায়তা তহবিলের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। খবর রয়টার্স।

বিশ্ব অর্থনীতি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট মহামারীর ধাক্কা সামলে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির নতুন বাস্তবতায় খাপ খাইয়ে নিতে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। এমন এক সময় সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের সংকটে ডিভাইস ব্র্যান্ড মার্কিন গাড়ি নির্মাতারা ছাড়াও অন্য ব্র্যান্ডগুলো উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে। চিপ সংকট দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে করোনায় বিধ্বস্ত মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এমন আশঙ্কা থেকেই স্থানীয়ভাবে চিপ উৎপাদন জোরদারে তহবিলের জোগান দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

গত বুধবার চিপ সংকট পর্যালোচনার নির্বাহী আদেশে সই করার পর জো বাইডেন বলেন, তিনি তার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিপ সংকটের সমাধান চিহ্নিত করতে খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। চিপ খাত ঘিরে মার্কিন কংগ্রেস এরই মধ্যে একটি বিল অনুমোদন দিয়েছে। চিপ উৎপাদনে আমরা সক্ষম তা নিশ্চিতে হাজার ৭০০ কোটি ডলারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমি তহবিলের জোগানের জন্য চাপ দেব।

এদিকে গত বুধবার সকালে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (এসআইএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, চিপ সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা বাইডেন প্রশাসনকে শুরু থেকে চাপ দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে কংগ্রেসকে চাপ দেয়া হয়, তারা চিপ ইন্ডাস্ট্রিকে সংকট কাটিয়ে উঠতে তহবিল দিয়ে সহায়তা দিতে পারে কিনা। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসকে দেশীয় চিপ উৎপাদন জোরদার এবং গবেষণায় উচ্চাভিলাষী বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।

এসআইএর আহ্বান আমলে নিয়ে বাইডেনের নির্বাহী আদেশের আওতায় চিপ সরবরাহ চেইন ঘিরে ১০০ দিনের একটি পর্যালোচনা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পর্যালোচনায় যে চারটি ক্রিটিক্যাল পণ্যকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সে তালিকায় রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর চিপ, ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য বৃহৎ সক্ষমতার ব্যাটারি, রেয়ার আর্থ মিনারেল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য।

চিপ খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, বিশ্বজুড়ে চিপ সংকট দেখা দেয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কালো তালিকাভুক্তি চিপ সংকট দেখা দেয়ার অন্যতম কারণ। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং কতদিন স্থায়ী হবে তা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুলসংখ্যক চিপ মজুদ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া চিপ সংকট দেখা দেয়ার পেছনে জাপানের একটি বৃহৎ চিপ উৎপাদন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনের প্রভাব এবং ফ্রান্সে করোনা পরিস্থিতির অবনতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রতিবেদনে সবচেয়ে বড় মৌলিক কারণ হিসেবে ইঞ্চি সাইজের অধিকাংশ চিপ উৎপাদক কারখানার মালিক এশীয় হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কারখানা মালিকের সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঘাটতি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত ফোন, ল্যাপটপ ট্যাবলেটের পাশাপাশি গাড়ি উৎপাদনে চিপের চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। বিনিয়োগ ঘাটতি থাকায় তারা ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

গত বছর মে মাসে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই হুয়াওয়ের ওপর নতুন বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নতুন চিপ ক্রয়াদেশ নেয়া স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) লিমিটেড। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি চিপ নির্মাতা হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মুখে হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুলসংখ্যক চিপ মজুদের পথে হাঁটে।

বিশ্লেষকরা চলতি বছর চিপ সংকট বিষয়ে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল। পরিস্থিতির মধ্যেও গত বছর টিএসএমসি, ইউনাইটেড মাইক্রোইলেকট্রনিকস করপোরেশন মিডিয়াটেক ইনকরপোরেশনের রাজস্ব বেড়েছে। রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল টিএসএমসি। ভয়াবহ মহামারীর মধ্যে বাসায় ব্যবহারের জন্য কম্পিউটিং ডিভাইসের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির কম্পিউটিং ডিভাইস নির্মাতারা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কাজ করছে। এর ফলে চিপের চাহিদা বেড়েছে, যা টিএসএমসির চিপ বিক্রি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন