পার্লামেন্ট ভাঙার সিদ্ধান্ত কাঠমান্ডু হাইকোর্টে বাতিল

পদত্যাগ করবেন না কেপি শর্মা অলি

বণিক বার্তা ডেস্ক

নেপালে পার্লামেন্ট ভাঙার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগাম নির্বাচনের বিষয়টিকেও অবৈধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিষয়টিকে নেপালের ক্ষমতাসীন দলের কোন্দলে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নেপালি প্রধানমন্ত্রী রায় মেনে নিলেও পদত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। বরং তার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব সংসদকেই দিতে চান তিনি।

দলের নেতাদের কাছ থেকে নীতিগত বিষয়ে সহায়তা পাচ্ছেন না এমন কারণ দেখিয়ে গত ডিসেম্বরে পার্লামেন্ট  ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন অলি। তবে দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্ট  ভাঙার এখতিয়ার নেই। তাই কেপি শর্মা অলির পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন দেশটির রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। একই সঙ্গে ঘোষণা দেয়া হয় আগাম নির্বাচনের দিনক্ষণও।

মূলত নেপালে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) অন্য দুই শীর্ষ নেতা পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড মাধব কুমার নেপালের নেতৃত্বাধীন অংশের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অলি। এর জের ধরে দেশটির রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়। পার্লামেন্ট ভাঙার পরই অলিকে দল থেকে বহিষ্কার করে এনসিপির প্রচণ্ড নেতৃত্বাধীন অংশটি। একই সঙ্গে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। শুনানির পর সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন আদালত।

অলির সহযোগী সূর্য থাপা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন পদত্যাগ করবেন না। এখন এটার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি সংসদের মুখোমুখি হবেন।

তবে বিষয়টি কোন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি সূর্য থাপা। অন্যদিকে, আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে অলির পদত্যাগের দাবিতে গতকাল অনেক মানুষ লাল-সাদা পতাকা হাতে কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এনসিপির বিরোধী পক্ষও।

নেপালি প্রধানমন্ত্রীর বিরোধীরা বলছেন, আদালতের রায় প্রমাণ করে, অলি সরকার চালাতে ব্যর্থ। সেই সঙ্গে তাকে স্বৈরাচার বলেও আখ্যা দেন বিক্ষোভকারীরা।

আদালতের রায়ে আগামী মার্চের মধ্যে সংসদ অধিবেশন বসানোরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতিতে কেপি শর্মা অলি এখন এনসিপিতে তার পক্ষের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

অলির পক্ষের এনসিপির মুখপাত্র সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি জানান, গতকাল দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে রায় মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা। তারা দলের জাতীয় কমিটি অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গেও পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে চান।

অলি পদত্যাগ করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রদীপ বলেন, আমরা বলতে চাচ্ছি, দেশ এভাবে চলতে পারে না। দেশের জন্য যেটি সবচেয়ে ভালো সেটিই প্রধানমন্ত্রী করবেন।

অলি যখন তার পক্ষের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তখন প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন পক্ষটি নেপালি বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। গতকাল বিকালেই প্রচন্ডের নেতৃত্বে একটি দল নেপালি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দিউবার সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নেপালের সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় হয়তো দেশটির রাজনীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু দেশটির সংকট এখনো কাটেনি।

ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কৃষ্ণা পোখারেল দেশটির গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অলির উচিত ছিল পদত্যাগ করে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা। তাহলে তা নেপালের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করত। কিন্তু অলি তো এত সহজে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার মানুষ নন। 

অন্যদিকে, কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটির স্কুল অব -এর সাবেক ডিন বিপিন অধিকারীর মতে, যেদিন অলি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন সেদিন থেকেই তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীতে পরিণত হয়েছেন। সে হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর তো পদত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। ফলে এখন রাষ্ট্রপতি চাইলে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।

অধ্যাপক আরো বলেন, এখন চাইলে এনসিপির প্রচন্ড-মাধব অংশ, নেপালি কংগ্রেস জনতা সমাজবাদী পার্টি মিলে জোট গঠন করতে পারে। তবে তার আগে, এনসিপিকে আইনিভাবে বিভক্ত হতে হবে। কারণ রাজনৈতিকভাবে দলটিতে দুটি পক্ষ তৈরি হলেও আইনত তারা এখনো একটি দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত ডিসেম্বরে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে অলি যে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছিলেন, সহসা তা মিটছে না। আদালতের রায় হয়তো নেপালের রাজনীতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে পারবে, কিন্তু এতে সংকট কাটছে না। এক্ষেত্রে নেপালি কংগ্রেস যদি এর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, সংকট আরো ঘনীভূত হবে। কারণ তাদের জোটে না টেনে নতুন সরকার গঠন সম্ভব নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন