ওভারলোডে ভাঙা বেইলি ব্রিজের ক্ষতিপূরণ চেয়ে সওজের ২৫ মামলা

শামীম রাহমান

পাথর বোঝাই ট্রাক পার হওয়ার সময় রাঙ্গামাটির কুতুকছড়িতে একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে যায় গত ১২ জানুয়ারি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তিনজনের। সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের স্থানীয় প্রকৌশলীদের দাবি, ট্রাকটি নির্ধারিত ওজনসীমার চেয়ে বেশি পণ্য নিয়ে ব্রিজ পার হচ্ছিল। অতিরিক্ত ওজনের কারণেই বেইলি ব্রিজটি ভেঙে গেছে বলে দাবি তাদের। ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করেছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)

শুধু রাঙ্গামাটিতে নয়, ওভারলোডের কারণে বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ২৫টি ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মামলা হয়েছে সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগে। মামলার সংখ্যা পাঁচ। একইভাবে মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগে চারটি, পিরোজপুর সড়ক বিভাগে তিনটি, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগে দুটি, শেরপুর সড়ক বিভাগে দুটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে ভোলা, নীলফামারী, দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, মাগুড়া, বগুরা টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগে।

মামলাগুলোর বিষয়ে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (আইন) আবদুর রৌফ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ক্ষতিপূরণের মামলাগুলো করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে। মামলাগুলো দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীরা। সব মামলা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা নিষ্পত্তির পর্যায়ে পৌঁছায়নি। মামলাগুলো মহাসড়ক বিভাগের আইন অনুবিভাগ তদারকি করছে বলে জানান তিনি।

ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আসলে নির্বাহী প্রকৌশলীরা ঠিক করেন। এক্ষেত্রে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ওভারলোডের ফলে সেতু/বেইলি ব্রিজের ক্ষতি সাধন কিংবা ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে মামলা দায়ের অব্যাহত আছে। দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে আইনজীবীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইংয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সেতু (সাড়ে ৪০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের) রয়েছে হাজার ৪০৪টি। এর মধ্যে বেইলি ব্রিজের সংখ্যা ৮৫৬।

প্রকৌশলীরা জানান, বিশ্বে বেইলি ব্রিজের ব্যবহার শুরু করে ব্রিটিশরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যাতায়াতের সুবিধার্থে ধরনের সেতু নির্মাণ করত। পরবর্তী সময়ে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশের সেনাবাহিনী বেইলি ব্রিজ বানানো শুরু করে। বাংলাদেশে বেইলি ব্রিজের ব্যবহার শুরু হয় ব্রিটিশদের হাত ধরেই। বর্তমানে দেশে বিদ্যমান বেশির ভাগ বেইলি ব্রিজই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে দেশের বেইলি ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এমন বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করেছেন অধিদপ্তরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইংয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রৌথ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রায়ই বলা হয়, পুরনো-ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজের কথা। কিন্তু বাস্তবে আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ নেই। বেইলি ব্রিজ হলো একটি অস্থায়ী কাঠামো, যার নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা রয়েছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজন নিয়ে যখন কোনো যানবাহন ব্রিজে ওঠে, দুর্ঘটনাগুলো তখনই ঘটে। অর্থাৎ দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নয়, দায়ী অতিরিক্ত ওজনবাহী যানবাহন।

এদিকে পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বেইলি ব্রিজগুলো প্রতিস্থাপন করে কংক্রিটের স্থায়ী ব্রিজে প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর। রংপুর অঞ্চলের ২৮টি বেইলি ব্রিজ প্রতিস্থাপনের জন প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান আছে। জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি সেতু প্রতিস্থাপন (রংপুর জোন) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কংক্রিটের কাঠামোতে বদলে ফেলা হচ্ছে বেইলি ব্রিজগুলো। রংপুর সড়ক জোনের লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, বগুড়া, গাইবান্ধা ঠাকুরগাঁও সড়ক বিভাগের বেইলি ব্রিজগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। বেইলি ব্রিজগুলো বদলে নির্মাণ করা হবে পিসি গার্ডার আরসিসি গার্ডার সেতু। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বেইলি ব্রিজ এভাবে প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন