চাটমোহরে ৬টি ‘অপরিকল্পিত’ সেতুতে বেড়েছে দুর্ভোগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, পাবনা

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের কুদ্দুস সরকারের জমির পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে একটি সেতু। সেতুটির দুই পাশে নেই চলাচলের কোনো সড়ক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে লাখ টাকার সেতু কোনো কাজে আসে না স্থানীয়দের। কেন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তাও জানে না তারা।

একই রকম সেতু রয়েছে হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, ডিবিগ্রাম ইউনিয়নেও। ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে তিন ইউনিয়নে ছয়টি অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এসব সেতু উপকারের পরিবর্তে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন ভুতুড়ে সেতু রয়েছে বেশ কয়েকটি। এসব সেতুর কোনোটি ফসলি জমির মাঝখানে আবার কোনোটি খালের মধ্যে অবস্থিত। কিছু কিছু সেতু সঠিক স্থানে নির্মাণ করা হলেও তৈরি করা হয়নি সংযোগ সড়ক। অপরিকল্পিত অপ্রয়োজনীয় সেতুগুলো সাধারণ বাসিন্দাদের কোনো কাজে আসে না। কখনো কখনো এসব সেতু স্থানীয়দের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

স্থানীয়রা জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের নামে লোপাট করা হয়েছে সরকারের লাখ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টদের এমন অনিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে।

উপজেলার বিলচলন ইউনিয়ন ঘুরে অপরিকল্পিত এমন আরো একটি সেতু চোখে পড়েছে। সোনাহারপাড়া গ্রামের খলিশাগাড়ি বিলের পাড়ে সেতুর অবস্থান। সেতুর উত্তর পাশে যাতায়াতের কোনো সড়ক নেই। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়।

গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, যাতায়াতের জন্য আমাদের একটি সড়ক দরকার। কিন্তু সড়ক নির্মাণ না করে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। সেতু দিয়ে আমরা কী করব।

উপজেলার নিমাইচড়া গ্রামে একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়কে মাটি ফেলা হয়নি। ফলে স্বস্তির বদলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের রাউত্কান্দি বিলে নির্মিত একটি সেতুতে তৈরি করা হয়নি সংযোগ সড়ক। নির্মাণের পরপরই ওই সেতুটি ফাটল ধরে।

বিষয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করলে তত্কালীন উপজেলা প্রকৌশলী রাজু আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেয় কমিটি। কিন্তু সে প্রতিবেদন পড়ে আছে ফাইলবন্দি হয়ে। ঠিকাদার পুরোপুরি কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলেও তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে অপ্রয়োজনীয় স্থানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সেতু নির্মাণ করে সরকারি অর্থ লুটপাট অপচয় করা হয়েছে।

বিষয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি চাটমোহর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম শামীম এহসান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সৈকত ইসলাম বলেন, সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে অনেক আগে। আমি আসার পর এমন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। তার পরও অপ্রয়োজনীয় সেতুর বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি না দিলে তা দিতে বলা হবে। সড়ক নির্মাণের পদক্ষেপও নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন