আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে অতিধনীদের সংখ্যা ২৭ শতাংশ বাড়বে। সংখ্যার হিসাবে এটি ২০১৯ সালে ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪৪ জন থেকে বেড়ে ২০২৫ সাল নাগাদ ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৩ জনে পৌঁছবে। আর এক্ষেত্রে অতিধনীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়বে এশিয়া মহাদেশে। বৈশ্বিক সম্পদ পরামর্শক সংস্থা নাইট ফ্র্যাংকের ২০২১ ওয়েলথ রিপোর্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।
নাইট ফ্র্যাংক ১০ লাখ ডলার বা তার বেশি পরিমাণ (প্রাথমিক আবাসন ও সেকেন্ড হোমের বিনিয়োগ বাদ দিয়ে) সম্পদের মালিকদের ধনী এবং ৩০ লাখ ডলার বা তারও বেশি পরিমাণ সম্পদের মালিকদের অতিধনী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে অতিধনীদের সংখ্যা এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ বাড়বে। অতিধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ইন্দোনেশিয়া ও ভারত এ অঞ্চলে শীর্ষে থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মোট অতিধনীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ এশিয়ায় বসবাস করবে। এরই মধ্যে এ অঞ্চলটিতে সর্বাধিক ৩৬ শতাংশবিলিয়নেয়ারদের বসবাস।
আগামী পাঁচ বছরে অতিধনীদের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ বাড়বে আফ্রিকায়। এক্ষেত্রে অতিধনীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়ে জাম্বিয়া এবং ৩২ শতাংশ বেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলটিতে শীর্ষে থাকবে। একই সময়কালে বিশ্বজুড়ে মিলিয়নেয়ারদের সংখ্যা ৪১ শতাংশ বাড়তে চলেছে বলে জানিয়েছে পরামর্শক সংস্থাটি। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে অতিধনী ব্যক্তিদের সংখ্যা আগামী পাঁচ বছরে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
নাইট ফ্র্যাংক মধ্যপ্রাচ্যের গবেষণা প্রধান তৈমুর খান বলেন, মহামারীটি মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে পড়েছে ধনী ও অতিধনীরাও। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এ সম্পদ কেন্দ্রে গত বছর ধনী ও অতিধনীদের সংখ্যা যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ১ শতাংশ কমে গেছে। তবে এ পতন সব দেশে সমান ছিল না।
এমনকি সৌদি আরবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে অতিধনীদের সংখ্যা বেড়েছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী পাঁচ বছরে সৌদিতে অতিধনীদের সংখ্যা ২২৭ শতাংশ বেড়েছে। তৈমুর খান বলেন, এ অঞ্চলটি বিভিন্ন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যমূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা আশা করি, এ অঞ্চলে ধনী, অতিধনী ও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
এ সম্পদ প্রতিবেদনে নাইট ফ্র্যাঙ্কের সিটি ওয়েলথ ইনডেক্সও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতিধনীদের বসবাসে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করার ক্ষেত্রে লন্ডন ও নিউইয়র্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে সূচকে যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এর পরই রয়েছে প্যারিস, টোকিও ও হংকংয়ের নাম।
করোনাভাইরাস মহামারী সত্ত্বেও গত বছর বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক আবাসন খাতে ২৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত মূলধন বিনিয়োগ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে আবাসন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগে শীর্ষ তিনটি দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ হাজার ১৭০ কোটি, জার্মানিতে ১ হাজার ১১০ এবং যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৬০ কোটি ডলার বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে। চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২৩ শতাংশ অতিধনী বাণিজ্যিক আবাসন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। বিনিয়োগে অতিধনীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে লজিস্টিক, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও ডাটা সেন্টার। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে লন্ডন বাণিজ্যিক আবাসন খাত দেশের বাইরে থেকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি ডলার। ১২ লাখ ডলার কিংবা অধিক মূল্যের সবচেয়ে বেশি বাড়ি থাকা শহরের তালিকাতেও লন্ডন শীর্ষে রয়েছে। এক্ষেত্রে দুবাই ও সিডনি যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।