বিদ্যুৎ খাত

ঋণ নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসছে পাকিস্তান

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত কয়েক বছর চীন থেকে নেয়া ঋণে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর স্কিম (সিপিইসি) থেকে ৬০০ কোটি ডলার পেয়েছিল ইসলামাবাদ, যার অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়েছে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে। অর্থে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বেশ বিপাকে পড়ে গিয়েছে পাকিস্তান।

চুক্তি অনুযায়ী এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে পাকিস্তান সরকারকে। এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎও কিনতে হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ছে সরকারের। ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে ঋণের বোঝাও বেড়েছে। এমনকি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের মতো অর্থের সংকুলান হচ্ছে না দেশটির।

অবস্থায় চীনের ঋণ পরিশোধে আরো সময় চায় পাকিস্তান। সেই সঙ্গে কমাতে চায় সুদের হারও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বিদ্যুৎ খাতের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধের বিষয়ে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চলছে।

জানা গিয়েছে, আলোচনায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ চীনের কাছে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি নিয়ে বিদ্যমান চুক্তিগুলো বাতিল করতে চেয়েছে। কারণ ইসলামাবাদ মনে করছে, পাকিস্তানের আর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিতও করেছেন।

এর আগে গত বছরের মার্চেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল চীন সফরে যায়। সফরকারীদের নেতৃত্ব দেন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ওই সময় ইসলামাবাদ বিদ্যুৎ খাতে নেয়া ঋণের সুদ দশমিক শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়। সেই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের জন্য আরো ১০ বছর সময় চান আরিফ আলভি। দুটি প্রস্তাবই অনুমোদন পেলে বছরে অন্তত ৬০ কোটি ডলার বাঁচাতে পারবে পাকিস্তান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এশীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অন্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পাকিস্তানের আবেদনের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। আগামী মার্চের শেষ নাগাদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে।

তবে ঋণের সুদ কমানোর বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কোনো বক্তব্য রাখেনি চীন। সম্প্রতি বিষয়ে আবারো সরব হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। কিন্তু চীন বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে, তার কিছুই এখনো গণমাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়নি।

বিষয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক কলামিস্ট . ফারুখ সালিমের অভিমত, সাধারণত এসব বিষয় নিয়ে চীন প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা করে না। তারা যা সিদ্ধান্ত নেয়, তা বেশ গোপনই থাকে। সে কারণেই সম্ভবত তারা ইসলামাবাদের প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না।

গত বছর পাকিস্তানের কর্তাব্যক্তিদের ওই বেইজিং সফরে দেশটি জানিয়েছিল, সিপিইসির ঋণ পরিশোধ দেশটির জন্য মুশকিল হয়ে পড়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বছর পাকিস্তান সরকারকে ৬০০ বিলিয়ন রুপি বা দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে অর্থাৎ বিদ্যুৎ না কিনলেও এর পুরো মূল্যই পাকিস্তান সরকারকে পরিশোধ করতে হবে, যা দেশটির জন্য বিপাকের কারণ। কারণেই চীনা ঋণের ফাঁদ থেকে বের হতে এখন সব রকমের চেষ্টাই চালাচ্ছে পাকিস্তান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন