প্রশান্ত কুমার হালদারের নেতৃত্বে অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছে দেশের চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি দায় নিরূপণ করতে কমিটি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০২ সাল থেকে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়ও এ কমিটি নিরূপণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সুপারিশ করা হয়েছিল। সেখানে সাবেক সচিব ও একজন বিচারককে যুক্ত করে মঙ্গলবার সাত সদস্যের কমিটি চূড়ান্ত করে দেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানকে সভাপতি ও কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার হোসেনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক একেএম ফজলুর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কবির আহাম্মদ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-এর মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমীন। আর আদালত যে দুজনকে কমিটিতে যুক্ত করেছেন তারা হলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম ও সাবেক সচিব নুরুর রহমান।
কমিটি যে তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে, সেগুলো হলো বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।
আদালত আদেশে বলেছেন, এ তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সঙ্গে কমিটির কোনো সদস্য জড়িত থাকলে বা কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেই সদস্য দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে এ তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদ অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে বিদেশী অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ‘টিজ মার্ট ইনকরপোরেটেড’-এর করা এক আবেদনে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেয় মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চ। সেই আদেশের পর্যবেক্ষণে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজে উষ্মা প্রকাশ করা হয়।
২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথাও বলা হয় আদালতের পর্যবেক্ষণে। হাইকোর্ট মনে করে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান চালানো উচিত। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠগবাজ ব্যবসায়ী, প্রতারকরা যাতে জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে, বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এদের গোপন আঁতাত, পরিকল্পনা ভেঙে দিতে হবে।’
এ পর্যবেক্ষণের পরই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে সোমবার তা আদালতে দাখিল করে। তবে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) বিদেশী অংশীদার টিজ মার্ট ইনকরপোরেটেডের আইনজীবী ওমর ফারুখ এ কমিটির বিষয়ে আপত্তি তোলেন আদালতে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যাদের নিয়ে এ কমিটি করেছে, তারা কোনো না কোনো সময় এজিএম ছিল, ডিজিএম ছিল। সুতরাং তারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। অনেক কিছুতে তারা স্বাক্ষরকারী হয়েও থাকতে পারেন। তাদের দিয়ে এ বিষয়টির তদন্ত হলে ভালো ফল পাওয়ার আশা করা যায় না। তাছাড়া কেবল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
তখন আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবিত কমিটির সঙ্গে দুজন স্বাধীন-নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে যুক্ত করে কমিটি চূড়ান্ত করে দেন। আদালতে বাংলাদেশের ব্যাংকের পক্ষে খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ শুনানিতে অংশ নেন।