আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি

৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দ ছিল জনসন অ্যান্ড জনসনের

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০২০ সালে বিভিন্ন আইনি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ৩৯০ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছিল ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন (জেঅ্যান্ডজে) তাদের টেলকম পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে অভিযোগে গত কয়েক বছর ধরেই হাজারো মামলায় পড়েছে জেঅ্যান্ডজে। খবর রয়টার্স।

জেঅ্যান্ডজের বেবি পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অ্যাসবেসটস রয়েছে এমন অভিযোগে ২৫ হাজারেরও বেশি মামলা ঝুলছে, যা নিষ্পত্তিতে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। সোমবার এক সিকিউরিটিজ ফাইলিংয়ে তথ্য জানায় কোম্পানিটি। এর আগে গত নভেম্বর যে ২১০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখার কথা জানানো হয়েছিল, তার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ রাখতে হয়েছে।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বেবি পাউডারে যে ক্ষতিকর অ্যাসবেসটস রয়েছে, বিষয়টি জানতো জেঅ্যান্ডজে। ওই প্রতিবেদনের পর বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে পড়ে জেঅ্যান্ডজে এবং বিভিন্ন মামলা নিষ্পত্তিতে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হয় তাদের।

কোম্পানির বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নথিপত্রে দেখা গেছে, ১৯৭১ থেকে শুরু করে ২০০০-এর মাঝামাঝিতে জেঅ্যান্ডজে তাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখেছে, তাদের পাউডারে অল্প পরিমাণে অ্যাসবেসটস রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে কয়েকজন নারী তাদের ডিম্বাশয় ক্যান্সারের জন্য জেঅ্যান্ডজেকে দায়ী করে মামলা করে। এতে জেঅ্যান্ডজেকে ২১২ কোটি ডলার জরিমানা করেছিলেন আদালত। বর্তমানে বড় অংকের জরিমানার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে জেঅ্যান্ডজে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মার্ক লেনিয়ার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানান, নিজেদের বেবি পাউডারে অ্যাসবেসটসের উপস্থিতির তথ্য গোপন করার কারণে জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে বড় অংকের জরিমানা করেছেন মিসৌরির আদালত। কিন্তু বিনা সাজায় পার পেতে চায় জেঅ্যান্ডজে। একটি দায়িত্বশীল কোম্পানির উচিত তাদের বকেয়া পরিশোধ করা।

গত নভেম্বর ব্রুকলিনের এক যুগলকে ১২ কোটি ডলার জরিমানার আদেশ দেন নিউইয়র্কের আদালত। ওই নারী তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বেবি পাউডারে থাকা অ্যাসবেসটস ভূমিকা রেখেছে, আদালতে তা প্রমাণিত হওয়ায় জেঅ্যান্ডজেকে ওই জরিমানা করা হয়েছিল।

২০২০ সালের মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্যালকম পাউডার বিক্রি বন্ধ করে জেঅ্যান্ডজে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) কর্তৃক জেঅ্যান্ডজের বেবি পাউডারে অ্যাসবেসটসের উপস্থিতি প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রায় ৩৩ হাজার ট্যালকম পাউডার বোতল প্রত্যাহার করে নিয়েছিল তারা।

বিভিন্ন দিক থেকে গত কয়েক বছর ধরেই বেশ চাপের মুখে রয়েছে জেঅ্যান্ডজে। গত বছরের জুনে এশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে রঙ ফর্সাকারী দাবিদার ক্রিম বিক্রি বন্ধ করতে হয়েছে তাদের। বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদী বৈষম্যের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক বিতর্কের জেরে এমনতর ফর্সাকারী ক্রিম বেশ সামাজিক চাপের মধ্যে পড়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জেঅ্যান্ডজের এক মুখপাত্র জানান, ভারতে রঙ ফর্সাকারী বিভিন্ন ক্রিম বিক্রি বন্ধ করবে জনসন অ্যান্ড জনসন। কোম্পানিটি জানিয়েছিল, তারা এশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে নিউট্রোজেনা ফাইন ফেয়ারনেস পণ্যগুলো বিক্রি বন্ধ করবে।

স্বাস্থ্যসেবা পণ্য জায়ান্টটি জানায়, পণ্যগুলো তারা আর প্রস্তুত করবে না বা চালান পাঠাবে না। মূলত নারীদের লক্ষ্য করে এমনতর রঙ ফর্সাকারী ক্রিম বিক্রি করে জেঅ্যান্ডজেসহ ইউনিলিভার, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল রিয়েলের মতো ভোক্তা জায়ান্ট। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী হাজার ২৭৭ টন রঙ ফর্সাকারী ক্রিম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন