চালকদের ক্ষতিপূরণ চাইতে বাধা দিচ্ছে উবার

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের উবার চালকদের ক্ষতিপূরণ চাইতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং উবার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ছুটির দিনে কাজ করা ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া এক রায়ে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়।

গত শুক্রবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশ অনুযায়ী, ১০ হাজারের বেশি চালককে ১০ কোটি পাউন্ডের বেশি অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেবে উবার। সেই সঙ্গে রায় অনুযায়ী, চালকরা শ্রমিক হিসেবেও গণ্য হবেন।

এর আগে উবার তাদের পক্ষে যুক্তিতে বলেছিল, যুক্তরাজ্যে তাদের ৬০ হাজারের বেশি চালক স্বনির্ভর চালক হিসেবে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। ফলে তারা ছুটির দিনে কাজ করলে আলাদা অর্থ, জাতীয় মজুরি কাঠামো অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি বা পেনশন সুবিধা পাবেন না।

কিন্তু এসব সুবিধার দাবিতে উবারের বিরুদ্ধে আদালতে যায় ফারার আসলাম নামে দুই চালকের নেতৃত্বে ২৩ জনের একটি দল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার রায় দেন।

রায়ের পর উবারের উত্তর-পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার জেমি হেউড বলেন, ২০১৬ সাল থেকে কাজ করেন এমন অল্প কিছু চালক কেবল শ্রমিক হিসেবে গণ্য হবেন। কিন্তু এখন যারা উবার অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছেন তারা রায়ের আওতায় পড়বেন না।

উবারের মুখপাত্র বলেন, যাত্রার পর থেকে উবারের ব্যবসায়িক নীতিমালায় বহু পরিবর্তন এসেছে। যেমন এখন চালকরা তাদের উপার্জনের ওপর বেশি অধিকার ভোগ করেন, যাত্রাপথে কোনো অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার জন্য বিনা মূল্যে বীমার ব্যবস্থা করা হয়েছে ইত্যাদি।

এদিকে, উচ্চ আদালতের রায়ের পর উবার কর্তৃপক্ষের দেয়া বক্তব্যে বিস্মিত ক্ষুব্ধ উবার চালকরা। তাদেরই একজন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায় শুনে আমি বেশ খুশি হই এবং এটা ভাবি, অবশেষে কিছু পরিবর্তন তো এলো। কিন্তু এর পরই উবারের বার্তা পেয়ে আমি হতবাক হয়ে যাই। তারা বলেছে, কেবল কিছু চালক ক্ষতিপূরণ পাবেন!

উবার কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলে মনে করছেন আইনজীবীরাও। হাজার ২০০ চালকের পক্ষে কাজ করা আইনি সংস্থা লে ডের সহযোগী নিগেল ম্যাকে বলেন, এত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তারা (উবার কর্তৃপক্ষ) এটা বলতে পারে না। তারা যে পরিবর্তনের কথা বলছে, তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তারা যেটা বলছে সেটা বিভ্রান্তিকর। বার্তার মাধ্যমে চালকদের ক্ষতিপূরণ চাইতে বাধা দিচ্ছে উবার।

সংস্থাটি মনে করে, চালকপ্রতি উবারকে ১২ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, উবার যদি ফারার আসলামের করা মামলাটির ওপর দেয়া রায় বাস্তবায়ন না করে, তাহলে এর সঙ্গে যুক্ত অন্য মামলাগুলোও কর্মসংস্থান ট্রাইব্যুনালে শুরু হয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্যই মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

ম্যাকে বলেন, আদালতের রায়টি পরিষ্কার স্পষ্ট। যেখানে বলা হয়েছে, উবার চালকদের নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন ভ্রমণের ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেয়া, গ্রাহকদের রেটিংয়ের ওপর ভিত্তি করে জরিমানা করা ইত্যাদি। উবার তাদের নীতিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার যে কথা বলছে, সেখানে চালকদের ওপর নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নেই বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী।

একই সুরে কথা বলেন আরেক আইনি সংস্থা কেলার লেঙ্কনারের পরিচালক অ্যান্ড্রিউ স্মিথ। আট হাজারের বেশি চালকের পক্ষে আইনি লড়াই চালাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, উবার তাদের নীতিমালায় যতই পরিবর্তন আনুক না কেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, চালকদের শ্রমিক হিসেবেই গণ্য করতে হবে।

উবারের একটি সূত্রের দাবি, হেউডের বার্তা চালকদের বিভ্রান্ত করছে বা ক্ষতিপূরণ চাইতে বাধা দিচ্ছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। সূত্রটি বলছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাজের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো এনেছে, সেগুলোর বিষয়ে এখন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছে। আলোচনা শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি খোলাসা করা হবে।

তবে একই সঙ্গে তারা সরকারের কাছে উবারের মতো রাইডশেয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা প্রতিযোগিতার সুষম ক্ষেত্র নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন