অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুকে সংবাদ কনটেন্ট ফিরবে

বণিক বার্তা ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য সংবাদ কনটেন্ট দেখানো এবং শেয়ার করার সুবিধা পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। দেশটির সরকারের মিডিয়া বারগেইন আইন- সংশোধনী আনার ঘোষণার পর এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি। গত সপ্তাহের শেষদিকে আইনের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ায় নিউজফিড থেকে সব ধরনের সংবাদ সরিয়ে ফেলা এবং টাইমলাইনে শেয়ার করার সুবিধা বন্ধ করেছিল ফেসবুক। খবর বিবিসি।

গতকাল অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জোশ ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা শিগগিরই টাইমলাইনে বিভিন্ন প্রকাশকের সংবাদ দেখতে এবং শেয়ার করতে পারবেন। প্রস্তাবিত মিডিয়া বারগেইন আইনে কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। যে কারণে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রস্তাবিত আইনটির লক্ষ্য হলোফেসবুক গুগলের মতো অনলাইন জায়ান্টগুলোর প্লাটফর্মে সংবাদ প্রদর্শনের জন্য সংবাদ প্রকাশকদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি থাকতে হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর কারণে সংবাদ মাধ্যমগুলোর আয় কমে যাওয়ায় এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের দাবি, তাদের প্রস্তাবিত আইনটি প্রযুক্তি জায়ান্ট এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংবাদ কনটেন্টের মূল্য নিয়ে একটি সুষ্ঠু আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ফ্রান্সের সরকার প্রথম ধরনের একটি আইন চালু করেছে। এরপর অস্ট্রেলিয়া সরকার বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনটিতে সমর্থন দিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। আইনটির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুক গুগলের রাজস্বে গণমাধ্যমগুলোর ভাগ বসবে বিধায় শুরু থেকে কঠোর বিরোধিতা করে আসছে।

বিষয়ে ফেসবুকের নিউজ পার্টনারশিপ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পবেল ব্রাউন বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত হওয়ার পর দেশটিতে ফেসবুক টাইমলাইনে পুনরায় সংবাদ দেখানো এবং শেয়ারের সুবিধা চালুর বিষয়ে আশাবাদী। শিগগিরই অস্ট্রেলিয়া সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনার ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যাবে।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার স্পষ্ট করেছে মিডিয়া বারগেইন আইনটি কার্যকর হলে প্লাটফর্মে প্রকাশিত সংবাদে ফেসবুকের ক্ষমতা বজায় থাকবে। নিয়ে সংবাদ প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের বাধ্য করা হবে না। বরং আমরা চুক্তিতে যাওয়ার জন্য ক্ষুদ্র স্থানীয় প্রকাশকদের সমর্থন দিতে চুক্তিতে যাব।

বিশ্বজুড়ে সংবাদ প্রকাশকদের অভিযোগ তাদের ব্যয়ে তৈরি সংবাদ কনটেন্ট দিয়ে ইন্টারনেট জায়ান্টগুলো ধনী হচ্ছে। কয়েক দশক ধরেই এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। কারণ হলো রাজস্ব ভাগাভাগি না করলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জুড়ে দেয়া বিজ্ঞাপন থেকে ফেসবুক-গুগলের মতো ইন্টারনেট জায়ান্টগুলো প্রতি বছর বড় অংকের অর্থ উপার্জন করছে।

ডিজিটাল প্লাটফর্মের উল্লম্ফনে ঐতিহ্যবাহী বৈশ্বিক সংবাদ শিল্প টানা কয়েক দশক ধরে খারাপ সময় পার করছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনের আওতায় স্থানীয় সংবাদ প্রকাশকরা আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন নিয়ন্ত্রিত সার্চ জায়ান্ট গুগল অস্ট্রেলিয়ায় সেবা বন্ধের হুমকি দিলেও পরে দেশটির প্রকাশকদের সঙ্গে কনটেন্ট শেয়ারিং চুক্তি করেছে। যদিও চুক্তিটির আর্থিক লেনদেন বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে ফেসবুক দেশটিতে নিজেদের প্লাটফর্মে সংবাদ শেয়ার করা এবং পড়া দুই অপশনই বন্ধ রেখেছে। এক্ষেত্রে ফেসবুকের যুক্তি হলো গুগল সার্চ ফলাফল আরো উন্নত করতে অনুমতি ছাড়াই সংবাদ মাধ্যমের কনটেন্ট ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু গণমাধ্যমগুলো নিজেদের পাঠক বাড়াতে স্বেচ্ছায় ফেসবুকের প্লাটফর্মে নিজেদের কনটেন্ট শেয়ার করে আসছে। কাজেই অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনটি তাদের ব্যবসার জন্য নেতিবাচক। যে কারণে জটিলতা এড়াতে তারা দেশটিতে নিজেদের প্লাটফর্মে সংবাদ মাধ্যমগুলোর কনটেন্ট শেয়ারিং বন্ধ রেখেছে।

ফেসবুকের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনে ফেসবুকের সঙ্গে প্রকাশকদের সম্পর্কের বাস্তবতা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বিবেচনায় নেয়া হয়নি প্রকাশকরা কেন স্বেচ্ছায় ফেসবুকের প্লাটফর্মে তাদের কনটেন্ট শেয়ার করে আসছেন।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এখন পণ্যের প্রচারণার জন্য ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। কারণ ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার চেয়েও দ্রুত বেশিসংখ্যক টার্গেট গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন বিজ্ঞাপন রাজস্বের ৫৩ শতাংশই গুগলের দখলে রয়েছে। আর ফেসবুকের দখলে রয়েছে ২৩ শতাংশ।

ফেসবুক অস্ট্রেলিয়ায় তাদের প্লাটফর্মে সংবাদ কনটেন্ট দেখানো এবং শেয়ারের সুবিধা বন্ধ করে দেয়ায় দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলোর সাইটে আগের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম মানুষ প্রবেশের তথ্য সামনে এসেছে।

অবশ্য ফেসবুক সংবাদ দেখানো বন্ধের পর অস্ট্রেলিয়া সরকার জানিয়েছিল, ফেসবুকের সংবাদ শেয়ারিং বন্ধে কিংবা গুগলের সার্চ সেবা বন্ধের হুমকিতে তারা বিচলিত নয়। তাদের প্রস্তাবিত আইনটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। ইন্টারনেট জায়ান্টগুলোর ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য নয়; বরং নতুন আইনটির রূপরেখা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদ প্রকাশকদের মুনাফায় একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির জন্য তৈরি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন