প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্যই ছিল না বরং এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষা আন্দোলন (ভিত্তিক) নয়, এ ভাষা আন্দোলন আমাদের বাঙালি জাতি হিসেবে সার্বিক অর্জনের আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু সেটা আমাদের করে দিয়ে গেছেন, যেটা ধরে রেখে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই সরকার দেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা আঘাত হেনেছিল আমাদের সংস্কৃতির ওপর, ভাষার ওপর। এর প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পাকিস্তানিরা যখন সিদ্ধান্ত নেয় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে, তখনই বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ শুরু করেন।
ভাষা আন্দোলনের কারণে বঙ্গবন্ধুর কারাবরণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু প্রতিবাদই নয়, ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর সেই সংগ্রাম করতে গিয়ে পাকিস্তান আমলে বারবার তিনি কারাবরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বঙ্গবন্ধু সেখানে বক্তৃতা করে বলেন, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এ আন্দোলন ছিল বাঙালির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষা আন্দোলনই নয়, বাঙালি জাতি হিসেবে সার্বিক অর্জনের আন্দোলন।’
দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭০-এর নির্বাচনের পরে ’৭১-এ আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করি এবং জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দেন সেখানে বাংলা ভাষাই ছিল রাষ্ট্রীয় ভাষা। সেই মর্যাদাটাই আমরা পাই। তিনি বলেন, ’৫৬ সালে শহীদ মিনার তৈরি করা, ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া—এ সব কিছু তখন আওয়ামী লীগই করে। ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনশনরত অসুস্থ বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে বের করে তার দাদা টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গেলেও সুস্থ হয়ে ফিরেই পুনরায় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আবারো আন্দোলন শুরু করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের দাবি তখন জাতির পিতা তার বিভিন্ন ভাষণে করে গিয়েছেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সিরিজের বইগুলো পড়ে দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এটা পড়বেন। তাছাড়া যারা গবেষণা করেন, তাদের বলব মহামূল্যবান দলিল আপনারা এখানে পাবেন।’