সুনামগঞ্জে একসঙ্গে ৬৫টি নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। গতকাল দুপুরে এসব মামলার রায় ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন। রায়ে সংসারে সম্মত হওয়ায় ৫৪ স্বামীকে স্ত্রী-সন্তানের কাছে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। অন্য ১১টি মামলায় স্বামীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নারী নির্যাতন ও যৌতুকসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৬৫ জন নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘদিন এসব মামলার বিচারকাজ চলছিল। নির্যাতনের শিকার নারীরা তাদের সন্তানদের নিয়ে অনিশ্চিত এক জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৫৪ স্বামীকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবে সংসার করার শর্তে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। তবে ১১টি মামলায় স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
বিবাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করা আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক চৌধুরী বলেন, কিছু ঘটনা নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। এ কলহের ফলে একটি দাম্পত্যজীবন নষ্ট হয়ে আদালতে এসে হয়রানি হয়। সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নিজ উদ্যোগে অনেক দম্পতির জীবন নষ্টের পথ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে আমি একটি মামলার বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলাম। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রকম ব্যতিক্রমী রায়ে আদালতের কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এর আগেও ৪৭টি মামলার একইভাবে রায় দেন আদালত। এ রকম রায়ে আদালতে মামলা জট কমবে এবং মানুষ আদালতে ঘন ঘন হাজিরা দেয়া থেকে রক্ষা পাবে। এ রকমভাবে দ্রুত মামলার রায় হলে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের জন্য ভালো দিক।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন বলেছেন, পরিবারে ঝামেলা থাকবে, অভাব থাকবে সবকিছু মানিয়ে চলতে হবে। যদি আবার কোনো ঝামেলা হয় লিগ্যাল এইডে অভিযোগ দেবেন, সেখানে মামলা ছাড়াই বিচারকের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচাতে স্বামীদের ভালো হওয়ার সুযোগ দিয়ে এ ধরনের রায় দেয়া হয়। আমরা এর আগেও এ রকম রায় দিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ নভেম্বর একই আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন একদিনে পৃথক ৪৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলায় ৪৭টি পরিবারকে আপসের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে পাঠিয়েছিলেন।