বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ইন্টারনেট বাজারে নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী টিকটকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা জোরদার করতে সম্প্রতি ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া স্টার্টআপ শেয়ারচ্যাট ক্রয়ের জন্য আলোচনা চালাচ্ছে টুইটার। সূত্র টেকক্রাঞ্চ।
যদিও আগেই বেঙ্গালুরুভিত্তিক শেয়ারচ্যাটে বিনিয়োগ করেছে আমেরিকান এ কোম্পানি। এবার তারা পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় স্টার্টআপটিকে ১১০ কোটি ডলারে কিনে নেয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ৯০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। শেয়ারচ্যাটে আরো বিনিয়োগ রয়েছে লাইটস্পিড পার্টনার্স ইন্ডিয়া, ইলেভেশন ক্যাপিটাল এবং ইন্ডিয়া কৌশন্টসহ অন্যদেরও।
টেকক্রাঞ্চের সূত্রমতে, টুইটারের সঙ্গে শেয়ারচ্যাটের আলোচনাটি এখনো চূড়ান্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছায়নি। তাই বিষয়টিকে এখনো অনেকটা গোপনীয় হিসেবেই রাখা হয়েছে।
টুইটার মূলত শেয়ারচ্যাটের ভিডিও অ্যাপ মৌজ নিয়ে আগ্রহী। আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান নিয়ে অ্যাপটি বর্তমানে রীতিমতো চীনা অ্যাপ টিকটকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে চুক্তির ব্যাপারে অবশ্য টুইটার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অফিশিয়াল মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানাচ্ছে টেকক্রাঞ্চ।
উল্লেখ্য, নিজেদের স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে পৃষ্ঠপোশকতা করার উদ্দেশ্যে ভারত গত বছর তাদের দেশে টিকটক নিষিদ্ধ করে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের উদ্যোগের কারণে শেয়ারচ্যাটের মতো দেশীয় অ্যাপে ঝুঁকেছে দেশটির জনগণ। এরই মধ্যে ৮০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে মৌজ অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বিভিন্ন আকর্ষণীয় ফিচারসংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য খুব অল্প দিনেই অ্যাপটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে, স্ন্যাপ তাদের ক্যামেরা কিটটি ভারতীয় সংক্ষিপ্ত ভিডিও অ্যাপের সঙ্গে একীভূত করতে শেয়ারচ্যাটের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই প্রথম স্ন্যাপ ভারতীয় কোনো কোম্পানির সঙ্গে এ জাতীয় অংশীদারিত্ব গঠন করল।
তবে শুধু টুইটারই নয়, অন্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যচ্ছে শেয়ারচ্যাট। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে স্ন্যাপ ও গুগলও।
গত জানুয়ারিতে টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ উঠিয়ে নিতে ভারতীয় এ স্টার্টআপটি গুগল, স্ন্যাপ ও টুইটারসহ বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে নিচ্ছে।
১৬ কোটি বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে বলে দাবি করা শেয়ারচ্যাট তার সামাজিক নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনে ১৫টি ভারতীয় ভাষা সংযুক্ত করেছে। ভারতের ছোট শহর ও মফস্বল শহর থেকে বড় সংখ্যার অনুসারী রয়েছে তাদের। ভারতের অন্যতম ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট সাজিত পাই অ্যাপটিকে রীতিমতো ‘ইন্ডিয়া টু’
হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের খুব কম সংস্থারই শেয়ারচ্যাটের মতো এত অনুসারী রয়েছে, বা তারা এ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। বলা হচ্ছে, এর নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে ছোট শহরের পাশাপাশি গ্রামের অনলাইন ব্যবহারকারীরাও। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে।
আঙ্কুশ সাচদেবা, ভানু প্রতাপ সিং ও ফরিদ আহসান মিলে ২০১৫ সালে তৈরি করেন শেয়ারচ্যাট। বার্তা আদান-প্রদানের পাশাপাশি এর মাধ্যমে ভিডিও, কৌতুক এবং গানও শেয়ার করা যায়। শেয়ারচ্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আঙ্কুশ সাচদেবা বলেন, আমাদের স্টার্টআপটি ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, ব্যবহারকারীরা দিনে গড়ে এখানে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় দিচ্ছেন।
ভারতের বড় বড় শহরের বাইরে ছোট শহর ও মফস্বল এলাকাগুলোয় পৌঁছতে এখনো রীতিমতো লড়াই করছে টুইটার। জানুয়ারিতে ভারতে টুইটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৭ কোটি ৫০ লাখে। এটি গুগল সমর্থিত ভারতীয় অ্যাপ্লিকেশনে সংবাদ ও সে সংক্রান্ত অন্যান্য স্থানীয় ঘটনা সম্পর্কিত বাছাইকৃত টুইটগুলো সামনে নিয়ে আসার জন্য নিউজ ও সোশ্যাল অ্যাপ ডেইলিহান্টের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে প্রবৃদ্ধিকে তরান্বিত করা সংক্রান্ত চাপ বৃদ্ধির ফলে আমেরিকার এ সোশ্যাল নেটওয়ার্কটি গত বছর তার পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রগুলোকে আরো প্রশস্ত করতে উদ্যোগী হয়।