দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রেডিও মেরামতের মাধ্যমে খুবই ছোটভাবে যাত্রা হয়েছিল সনির। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও টেরিটরিতে সচল বহুজাতিক কনগ্লোমারেটটি। ‘সনি’ ব্র্যান্ডের নামটি শুনলে অনেকের মাথায় প্রথমে যে জিনিসগুলো আসে, সেগুলো হচ্ছে টিভি, ক্যামেরা অথবা প্লে স্টেশন। মূলত সনি এমন একটি ব্র্যান্ড, যেটি আমাদের প্রাত্যহিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কয়েক দশক ‘সনি’ তাদের সেরা কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করে আসছে। বর্তমানে ‘সনি’ তাদের পণ্যসামগ্রীতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। যা-ই হোক, এ ‘সনি’র ইতিহাসের ব্যাপারে অনেকেই হয়তো জানে না। অনেকেই জানে না ‘সনি’ সফলতার পাশাপাশি দেখেছে ব্যর্থতার মুখও। ‘সনি’ কীভাবে আজকের এ অবস্থানে এসেছে এবং তাদের সফলতার কাহিনী অনুসন্ধান করা যাক:
‘সনি’ ব্র্যান্ডটির বৈশ্বিক যাত্রা হয় ষাটের দশকে। ১৯৬০ সালে ‘সনি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ‘আকিও মোরিতা’ যুক্তরাষ্ট্রে ‘সনি’র প্রথম সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি আমেরিকায়, জাপানে তৈরি হওয়া প্রডাক্টসগুলোর ব্যাপারে একটি ভালো ধারণা সৃষ্টি করত। সে বছরই বিশ্বে প্রথম ‘সনি’ অল ট্রাঞ্জেস্টার পোর্টেবল টেলিভিশন বাজারে নিয়ে আসে। ১৯৬৮ সালে তারা প্রথমবার বাজারে নিয়ে আসে রঙিন টেলিভিশন। এর মাধ্যমে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেরা টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারারের খেতাবটি ছিল ‘সনি’র দখলে।
১৯৬৯ সালে একটি কম্প্যাক্ট ক্যাসেট রেকর্ডার বের করে ‘সনি’। কিছুদিন পর তারা নতুন করে বিশ্বের প্রথম কমার্শিয়াল ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডারের একটি অটোটেপ রিলিজ করে। ১৯৭৩ সালে ইলেকট্রনিকস ক্যাটাগরিতে এগিয়ে থাকার জন্য ‘সনি’ একটি অ্যাওয়ার্ড পায়। ১৯৭৯ সালে প্রথমবার ‘স্টেরিও ক্যাসেট প্লেয়ার, ওয়াকম্যান’
নিয়ে আসে। যেটি ছিল বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল ক্যাসেট প্লেয়ার।
১৯৮১ সালে ‘সনি’ ব্র্যান্ড ‘ফিলিপস’ এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে ‘কম্প্যাক্ট ডিস প্লেয়ার’ রিলিজ করে বাজারে। ১৯৯৪ সালে তারা লঞ্চ করে ‘প্লে স্টেশন ১’। যেটি তখন ১০ কোটি ৪০ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়। তবে ২০০০ সালে লঞ্চ হওয়া ‘সনি প্লে স্টেশন ২’ ছিল ‘সনি’র অন্যতম সফল একটি ইলেকট্রনিকস পণ্য।
২০০১ সালে ‘এরিকসন’ কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘সনি’ তাদের মোবাইল ডিভিশন ‘সনি এরিকসন মোবাইল কমিউনিকেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। যে ফোনগুলো ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কিন্তু বাণিজ্য দুনিয়ায় কেউই চিরদিন শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারে না। বিশেষ করে তাদের টেলিভিশনের চাহিদা বর্তমানে খুব কম। এর কারণ বাজারে অন্য কয়েকটি ব্র্যান্ডের শক্তিশালী অবস্থান। যে কারণে ‘সনি’র টেলিভিশনের বাজারে নিজেদের বাজার শেয়ার হারাতে শুরু করে। স্মার্টফোনের দিক দিয়েও ব্যর্থতা লাভ করেছে ‘সনি’। ‘সনি’ ২০১১ সালে তাদের ‘এক্সপেরিয়া’ মডেল লঞ্চ করেছিল হতে চেয়েছিল মোবাইল বাজারের রাজা। যে কারণে তারা শুধু প্রিমিয়াম ধরনের স্মার্টফোনই বাজারে আনতে থাকে। যেগুলোর দাম অনেক বেশি। কিন্তু তখন অন্যান্য স্মার্টফোন ব্র্যান্ড আরো কম দামে ভালো কিছু অফার করার কারণে সেখানেও বেশি একটা লাভের দেখা পায়নি তারা।
‘সনি’র এ রকম অনেক ডিভাইস তৈরি করেছিল তারা। যেগুলো দেখতে অসাধারণ হলেও দাম বিবেচনায় এবং অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাজার হারাতে শুরু করে ‘সনি’। এর পরও তারা থেমে থাকেনি। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ‘প্লে স্টেশন ৪’ এর ১০ কোটি ২০ লাখ ইউনিট বিক্রি করতে সক্ষম হয় ‘সনি’। সম্প্রতি তারা ‘প্লে স্টেশন ৫’ লঞ্চ করেছে বাজারে। এছাড়া তাদের কিছু গেম বিক্রির মাধ্যমে বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখে জাপানি এ ইলেকট্রনিকস জায়ান্টটি।
২০১৮ তে বিভিন্ন ভালো মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা বাজারে এনেও অনেক লাভ করেছে ‘সনি’। ‘সনি’র ক্যামেরা সেন্সর বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনেই ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তাদের ভালো মানের ক্যামেরা দিয়ে হলিউডের বিভিন্ন সিনেমার শুটিং এবং সেসব সিনেমার ভিডিওগ্রাফিক স্পন্সরও করে থাকে তারা।