দুটি দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের পুরনো উড়োজাহাজ নিয়ে উদ্বেগ

বণিক বার্তা অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী ৭৭৭ এবং লংটেইল এভিয়েশনের কার্গো ৭৪৭ দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের পুরাতন উড়োজাহাজগুলো নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব উড়োজাহাজের ব্যাপারে অধিকতর তথ্য-উপাত্ত তলব করেছে। এরই মধ্যে এমন বেশ কয়েকটি পুরাতন মডেলের উড়োজাহাজের উড়াল স্থগিত করা হয়েছে।

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারে বিমানবন্দর ত্যাগের কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটির জেট ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এবং ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ লোকালয়ে আছড়ে পড়ে। একই দিন নেদারল্যান্ডে লংটেইল এভিয়েশনের ৭৪৭ কার্গো বিমানের জেট ইঞ্জিনও ভেঙে পড়ে। দুটি উড়োজাহাজের জেট ইঞ্জিনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি। অবশ্য এই দুর্ঘটনার সঙ্গে তাদের কারিগরি ত্রুটির কোনো সম্পর্ক এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রেথিওনের মালিকানাধীন প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি বলছে, তারা ইঞ্জিনের ইনস্পেকশন প্রটোকল রিভিউয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করছে।

কলোরাডোর ডেনভারে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়া এবং লোকালয়ে বিভিন্ন অংশ আছড়ে পড়ার ঘটনার পরপরই বোয়িং তাদের পিডব্লিউ ৪০০০ টারবাইন বিশিষ্ট ৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজগুলোর উড়ান স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তবে বাধ্যতামূলক উড়ান স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে জাপান সরকার। বোয়িংয়ের পরামর্শের আগেই ইউনাইটেড তাদের ২৪টি ৭৭৭ উড়োজাহাজের উড়ান স্থগিত করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি শনিবারের দুই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্র্যাটের ইঞ্জিনের ব্যাপারে অধিকতর তথ্য তলব করেছে। 

অবশ্য নেদারল্যান্ডের ঘটনা একজন নারী সামান্য আহত হওয়া ছাড়া দুই দুর্ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, তারা শিগগিরই জরুরি উড়ান নির্দেশিকা জারি করবে। এছাড়া উড়োজাহাজের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিরতিকাল কমানো দরকার বলেও তারা মনে করছে।

কাকতালীয়ভাবে দুটি দুর্ঘটনাতেই জড়িয়ে গেছে পিডব্লিউ ৪০০০ টাইপ ইঞ্জিনের নাম। এই ধরনের ইঞ্জিন বর্তমানে খুবই কম সংখ্যক কিছু পুরনো উড়োজাহাজে রয়েছে। এর মধ্যে আবার কিছু মহামারীর কারণে অলস বসে রয়েছে। ফলে এতে এভিয়েশন খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই।

এরপরও বোয়িংয়ের জন্য এটি নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তারা ৭৩৭-ম্যাক্স মডেল নিয়ে যে গুরুতর ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে সেটি থেকে এখনো পুরোপুরি উদ্ধার পায়নি। দুটি বড় প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার পর এই ফ্ল্যাগশিপ উড়োজাহাজগুলোর উড়ান স্থগিত রয়েছে।

শিল্প বিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা ফ্লাইট গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক গ্রেগ ওয়ালড্রন বলেন, নিঃসন্দেহে এটি বোয়িং এবং প্র্যাট উভয়ের জন্য অস্বস্তিকর। তবে সময় যতো গড়াবে এরকম উড়োজাহাজ ও ইঞ্জিনের নানা ইস্যু সামনে আসবে। পিডব্লিউ ৪০০০ ইঞ্জিনবিশিষ্ট বোয়িংয়ে ৭৭৭-২০০ মডেলটি ক্রমেই প্রত্যাহার করা হচ্ছে। করোনাকালে এয়ারলাইনগুলো এটির উড়ান স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে জেনারেল ইলেকট্রিকের তৈরি ইঞ্জিন বিশিষ্ট ৭৮৭ এবং ৭৭৭-এর অন্য উড়োজাহাজ দিয়ে।

বোয়িংয়ের ৭৭৭-২০০ এবং ৭৭৭-৩০০ মডেলের উড়োজাহাজগুলো বেশ পুরনো। অপেক্ষাকৃত কম জ্বালানি সাশ্রয়ী এসব উড়োজাহাজ এখন আছে মাত্র পাঁচটি এয়ারলাইন্সে: ইউনাইটেড, জাপান এয়ারলাইন্স, এএনএ হোল্ডিংস ইনকরপোরেশন, এশিয়ানা এয়ারলাইন্স এবং কোরিয়ান এয়ার। এর মধ্যে বেশিরভাগই এখন স্থায়ীভাবে অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আছে। এগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির পিডব্লিউ৪০০০-১১২ জেট ইঞ্জিন।

বোয়িং জানিয়েছে, বর্তমানে পিডব্লিউ৪০০০ ইঞ্জিনবিশিষ্ট ৭৭৭ মডেলের মোট সক্রিয় উড়োজাহাজ রয়েছে ৬৯টি। আরো ৫৯টি অবসরে। বোয়িংয়ের সরবরাহকৃত ৭৭৭ সিরিজের ১ হাজার ৬০০টির বেশি উড়োজাহাজের মধ্যে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির ইঞ্জিনচালিত রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। 

উল্লেখ্য, আজকাল বোয়িংয়ের ৭৭৭ সিরিজের দূরপাল্লার উড়োজাহাজগুলোর অধিকাংশই ৭৭৭-৩০০ইআর অথবা ৭৭৭-২০০এলআর মডেলের। এগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে জিই৯০ ইঞ্জিন। ফলে এই উড়োজাহাজগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সতর্কতা দেয়নি বোয়িং।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থার রয়েছে বোয়িংয়ের ৭৭৭ সিরিজের চারটি উড়োজাহাজ। সবকটিই ৭৭৭-৩০০ইআর মডেলের। উড়োজাহাজগুলো হলো: পালকি, অরূণ আলো, আকাশপ্রদীপ, রাঙাপ্রভাত।

সূত্র: রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন