জাল টিআইএন ব্যবহার করে গাড়ি নিবন্ধন

দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক

গাড়ি নিবন্ধনে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন (ট্যাক্সপেয়ারস আইডেনটিফিকেশন নাম্বার) জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিআরটিএর সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন করতে গিয়ে দেখা যায়, জাল টিআইএন ব্যবহার করে প্রায় পাঁচ লাখ গাড়ি নিবন্ধন করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতাকে পুঁজি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এমন কাজ করেছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যার ফল এটি। এতে বছরের পর বছর বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তবে আশার কথা, এনবিআর বিআরটিএ তাদের শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন জালিয়াতি বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে সরকার অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে। এটি তারই একটি উদাহরণ। জালিয়াতি ধরা পড়েছে এবং সমস্যা সমাধানে দুই সংস্থা কাজ করছে, সেটা ইতিবাচক দিক। তবে বিষয়টি নিয়ে দুই সংস্থাকেই নিয়মিত কাজ করতে হবে। অনেক ভালো উদ্যোগও যথাযথ পরিচর্যা না করায় পরবর্তী সময়ে সুফল মেলে না। এক্ষেত্রে যেন সেটি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আয়কর অধ্যাদেশে জাল টিআইএন ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর ওপর আর্থিক জরিমানাসহ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আয়কর আইন অনুযায়ী, জাল টিআইএন ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে সেবা প্রদানকালে টিআইএন সনদ যাচাই না করলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে আয়কর বিভাগ। ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি জাল টিআইএন ব্যবহার করে বা অন্যের টিআইএন ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এনবিআরকে আরো সক্রিয় হতে হবে। এনবিআরের কার্যক্রম পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা প্রয়োজন। আইন অনুযায়ী, যেসব সেবা গ্রহণে টিআইএন প্রদান বাধ্যতামূলক তা যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগও থাকতে হবে।

কয়েক বছর আগে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন ব্যবস্থাপনাকে অনলাইনভিত্তিক করা হয়। ৩০টির উপরে সেবা নেয়া কিংবা কাজ করার ক্ষেত্রে -টিআইএন বাধ্যতামূলক করেছে এনবিআর। এসব সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে এনবিআরের সার্ভারে রক্ষিত তথ্যভাণ্ডারে যাচাই করে যে কারো টিআইএন সঠিক রয়েছে কিনা তা যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও মোটরগাড়ির নিবন্ধন নেয়ার ক্ষেত্রে এখনো ভুয়া টিআইএন কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিআরটিএ এনবিআরকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সরাসরি দ্রুত টিআইএন যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। এরপর টিআইএন যাচাই না করে গাড়ি নিবন্ধন দেয়া হলে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। জাল টিআইএন ব্যবহারকারী চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন তাদের খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিআরটিএর যারা এতে সহায়তা করেছে তাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভুয়া টিআইএন ব্যবহারকারীদের এখন খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। যেহেতু দুই সংস্থার সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন হয়ে গেছে, তাই গাড়ি রেজিস্ট্রেশন নবায়নের সময় ভুয়া টিআইএনধারীরা ধরা পড়বেই। তখন নবায়নে তাদের সঠিক টিআইএন দিতে হবে। আর এনবিআর তখন ওইসব গাড়ির মালিকের কর ফাইল পুনরুন্মোচন করবে। এটি কোনো সমাধান নয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা যাবে না বলা সমাধানযোগ্য নয়। পরবর্তী সময়ে তারা গাড়ি পুনর্নিবন্ধন করবে বা গাড়ির হাতবদল ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? জাল টিআইএন দিয়ে নিবন্ধন নেয়া গাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে বলে খবর মিলছে। গাড়ির নম্বর ধরে এর গ্রহীতাকে চিহ্নিত করা কঠিন কোনো কাজ নয়। এজন্য শুধু সদিচ্ছা জরুরি। সিস্টেম আধুনিকায়ন হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা বেড়েছে। যুগে এসে গাড়ির নম্বর জানার পরও মালিকদের না ধরার কোনো কারণ নেই। এক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগের সহায়তাও নেয়া যেতে পারে।

জাল টিআইএন ব্যবহার বন্ধে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পুরো প্রক্রিয়ার অটোমেশন প্রয়োজন। পাশাপাশি এনবিআরের ডাটাবেজ ব্যবহারের নীতিমালাও প্রণয়ন করতে হবে, যাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো টিআইএন যাচাই করতে পারে। বিআরটিএর মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে জাল টিআইএনের সংখ্যা কত তা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব অপরাধ বন্ধে এনবিআরের সক্রিয়তা তদারকি আরো শক্তিশালী করতে হবে।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন