মাথাপিছু সর্বাধিক ক্রয়াদেশ দিয়েও কেন টিকা সংকটে কানাডা

বণিক বার্তা অনলাইন

বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর টিকাগুলোর একটি বড় অংশ দেশের নাগরিকদের জন্য সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা করেছিল কানাডা।  এমনকি মাথাপিছু সর্বাধিক টিকা ক্রয়াদেশ দিয়ে রেখেছিল দেশটি।  কথা ছিল, দ্রুত দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনা হবে।কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যেতে পারেনি ট্রুডো সরকার।  অথচ প্রয়োজনের কয়েকগুণ বেশি টিকার ক্রয়াদেশ দেয়ার কারণে গত বছরের শেষ দিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন জাস্টিন ট্রুডো।

কানাডায় গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ১৪ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি মানুষ এর আওতায় এসেছেন। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, টিকাদানের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কানাডার অবস্থান ২০তম। শতকরা তিনজন কানাডীয় প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন।  যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ১৪ ও যুক্তরাজ্যে ২১। 

কানাডায় এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২৩ হাজার মানুষ কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২১ হাজারের বেশি।

দ্রুত টিকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিরোধীদের রোষের মুখে পড়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো। তীব্র সমালোচনার মধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন, টিকা নিতে ইচ্ছুক কানাডার প্রতিটি নাগরিক সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ তা পেয়ে যাবেন।খুব শিগগিরই প্রচুর পরিমাণে টিকার চালান দেশে ঢুকবে।

কানাডা কেন পেছনে পড়ছে

টিকা সরবরাহের জন্য মোট সাতটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে কানাডা।  ৪০ কোটি ডোজের বেশি টিকা কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজার ছাড়াও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন অ্যান্ড জনসনের সঙ্গে চুক্তি করে দেশটি।  যেখানে শেষের দুটি প্রতিষ্ঠানের টিকা এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায়।

তবে, এখনও চাহিদামতো টিকা পৌঁছেনি কানাডায়।  আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ফাইজার ও মডার্নার কাছে যথাযথ অগ্রাধিকার  পায়নি কানাডা।

শুরুতে কানাডা ইউরোপের কারখানাগুলো থেকে টিকা কিনতে বিনিয়োগ করেছিল।  কারণ ট্রুডোর ভয় ছিল, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন।  ফলে ফাইজার ও মডার্নার কাছ থেকে টিকা কিনতে চাইলে শেষ পর্যন্ত নাও পাওয়া যেতে পারে।

আংশিকভাবে এটি সত্যিও, কারণ গত ডিসেম্বরে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত টিকার জন্য দেশের নাগরিকদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করেন।  এই আদেশটিতে নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে বলে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেটি বহাল রেখেছেন। 

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে টিকা সরবরাহ করতেই রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় উৎপাদকরা।  এ পরিস্থিতিতে ইইউও যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটার কথা ভাবছে।  আর যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো অবকাঠামো নেই কানাডার স্থানীয় উৎপাদকদেরও।

গত বছরের শুরুতে, চীনের টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ক্যানসিনোর সঙ্গে ট্রায়ালের জন্য চুক্তি করেছিল কানাডা। শুরুতে ক্যানসিনো ট্রায়ালের জন্য টিকা পাঠাতে রাজিও হয়েছিল।কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত চুক্তিটির বাস্তাবায়ন হয়নি।

সমালোচকরা বলছেন, চীনের সঙ্গে এই ব্যর্থ চুক্তির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে কানাডা সরকার ফাইজার ও মডার্নার সঙ্গে চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে পারেনি।  গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রাহকদের সময়মতো টিকা সরবরাহ করতে পারেনি ফাইজার ও মর্ডানা, কিছু অর্ডার বাতিলও হয়েছে। ফলে এখনও পরিকল্পিত মাত্রায় টিকাদান শুরু হয়নি কানাডায়।

ম্যাকলিস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় এখন এক মিলিয়নের মতো টিকা সরবরাহ হচ্ছে। যার মাধ্যমে এই সপ্তাহে দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া যাবে। 

দেশটির সরকারি তথ্য বলছে, ৮০ বছরের বেশি বয়সী ১২ শতাংশ মানুষ ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের ৫৫ শতাংশকে টিকার প্রথম ডোজের আওতায় আনা গেছে। যদি সরবরাহকারীরা কথা ঠিক রাখে তাহলে মার্চের শেষ নাগাদ ৬ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেশটিতে ঢুকবে বলে আশা করছেন জাস্টিন ট্রুডো।

এদিকে, কানাডার অসংখ্য নাগরিক শীতকালীন কঠোর লকডাউনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা টিকাদানের এই ধীরগতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন।গত ৫ ফেব্রুয়রি কানাডার মতামত জরিপ সংস্থা অ্যাবাসকাস জানায়, টিকার এই ধীরগতি লিবারেল পার্টির সমর্থকদেরও হতাশ করেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ও ভোটের হিসাবেও। সরকার যথাযথভাবে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে পারছে না বলে মনে করছেন অনেক নাগরিক।

এমন পরিস্থিতিতে প্রদেশগুলোর প্রধানরাও নিজেদের মতো করে টিকা জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করেছেন।  গত বৃহস্পতিবার ম্যানিটোবা দুই মিলিয়ন ডোজ টিকা কেনার দরপত্র প্রকাশ করেছে। একইভাবে অটোয়াকে পাশ কাটিয়ে আলবার্টাও নিজেদের জন্য টিকা খুঁজছে।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন