উচ্চশিক্ষা এবং উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কাদের বলেন, আজ বিশ্বে বাংলা ভাষা হচ্ছে ষষ্ঠ ভাষা জনসংখ্যার দিক থেকে। অথচ জাতিসংঘে এখনো দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। আমরা আজ একুশের মঞ্চ থেকে সেই দাবি জানাচ্ছি। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের বিজয় সুসংহত হতে পারেনি, কারণ আমাদের প্রধান শত্রু সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতার ডাল-পালা বাংলাদেশে এখনো রয়ে গেছে।
দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উদার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির শিকড় উৎপাটনের প্রত্যয় আমাদের।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে চিরভাস্বর বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তত্কালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উপস্থাপন করেছিলেন।
গতকাল মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভোরে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ড. হাছান মাহমুদ। শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এর আগে একুশের প্রথম প্রহর মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শহীদ বেদিতে পুষ্প অর্পণেও অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অমর শহীদদের রক্তে রঞ্জিত ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তত্কালীন তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উপস্থাপন করেছিলেন।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে যাতে বাংলা প্রতিষ্ঠিত হয়, সে লক্ষ্য নিয়ে আমাদের সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
শহীদ মিনারে পৌঁছানোর আগে ড. হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে ভাষা শহীদ আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার ও শফিউরের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে যান। সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে নীরবে প্রার্থনা শেষে শহীদ মিনার অভিমুখে পদযাত্রা করেন তারা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আবদুর রহমান, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অমর একুশের প্রাক্কালে ভাষার মাসের কয়েকটি সভায় তথ্যমন্ত্রী ইতিহাস উদ্ধৃত করে বলেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকায় জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুই এর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ সভা আহ্বান করেন, তাতে সভাপতিত্ব করেন ও পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলনের জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয় এবং সেখানেও তিনি অনশনের মাধ্যমে ভাষার জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অনবদ্য অবদান ঠিকভাবে তুলে ধরতে ইতিহাসের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ।