‘গান রাজনীতি কিংবা মহামারীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না’

গানের দুনিয়ায় হিপনোসিসের বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য

ফিচার ডেস্ক

নিজের গানের স্বত্ব নিয়ে বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে নানা রকমের ভাবনা দেখা যায়। টেইলর সুইফট তার গানের স্বত্বের জন্য চরমভাবে লড়েছেন। এমনকি তার অনেক হিট গান নতুন করে রেকর্ড করেছেন। আবার উল্টো ঘটনাও দেখা যায়। অনেক বড় শিল্পী নিজের গানের স্বত্ব বিক্রি করে দিয়েছেনজীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী বব ডিলান তার ৬০০ গান প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করেছেন ইউনিভার্সাল মিউজিক পাবলিশিং গ্রুপের কাছে। স্টিভ নিকস তার কিছু গান প্রাইমারি ওয়েভের কাছে বিক্রি করেছেন ১০ কোটি মার্কিন ডলারে।

শিল্পীদের গানের ক্যাটালগ কিনে মুহূর্তে দুনিয়ায় দারুণ আলোচনার ঝড় তুলেছেন যে ব্যক্তি তার নাম মার্ক মের্কুরিয়াদিস, তিনি হিপনোসিস সংস ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা। হিপনোসিসের প্রতিষ্ঠা ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই মার্ক মিউজিক মোগল হিসেবে খ্যাতি পেয়ে গেছেন। আর পাবেনই বা না কেন! মুহূর্তে তার অধিকারে আছে শাকিরার সব গান। হিপনোসিস নিল ইয়ংয়ের অর্ধেক লিন্ডসে বাকিংহামের সব গান কিনে নিয়েছে। রিয়ান্নার অনেকগুলো হিট গানও আছে তাদের দখলে।

মার্ক মের্কুরিয়াদিসের বয়স এখন ৫৭। কানাডার মানুষ হলেও প্রতিষ্ঠা লন্ডনে। টরন্টোতে কাজ শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ কোম্পানি ভার্জিন রেকর্ডসে। টুইটার থেকে জানা যায়, মার্ক ভেগান ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব আর্সেনালের ভক্ত। মার্ক তার কর্মজীবনে এলটন জন, বিয়ন্সে গানস এন রোজেজের মিউজিক ম্যানেজার ছিলেন।

শাকিরা বলেছেন, মার্ক দুনিয়ার গীতিকারদের শুভাকাঙ্ক্ষী। অন্যদিকে শাকিরার সব গান কিনে নেয়ার পর মার্ক টুইটার বার্তায় তাকে ২৫ বছরের মধ্যে অন্যতম সফল সিরিয়াস গীতিকার হিসেবে আখ্যা দেন।

অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান কোনো গানের স্বত্বের জন্য গীতিকারকে যা দেয় হিপনোসিস তার দ্বিগুণ অর্থ দেয়। ২০১৮ সালে মার্ক মের্কুরিয়াদিস সিএনবিসিকে বলেছিলেন, তিনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গীতিকারদের অবস্থান বদলে দিতে চান। গীতিকারদের কোনো গানের জন্য মুনাফার আরো বেশি অংশ দিতে আগ্রহী মার্ক। তার কথায় তিনি গানের পাবলিশিং মার্কেটের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে চান। মিউজিক বিজনেস ওয়ার্ল্ডওয়াইডের মতে, গত বছর হিপনোসিসের মার্কেট ক্যাপিটাল ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত বছর নভেম্বরে ভ্যারাইটির এক প্রতিবেদন মতে, কোবাল্ট মিউজিক কপিরাইটস থেকে ৩৩ হাজার গানের স্বত্ব কিনে নিয়েছে ভ্যারাইটি, ৩০ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলারে।

বছর জানুয়ারির শেষ নাগাদ ১২৯টি ক্যাটালগ, ৬০ হাজার ৮৩৬টি গানের জন্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছে। এসব গানের মধ্যে আছে মডার্ন হিট এড শিরানের শেপ অব ইউ রিয়ান্নার আমব্রেলা মাসের শুরুতেও নতুন শেয়ার বাজারে ছেড়ে হিপনোসিস ১০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। সম্প্রতি হলিউড রিপোর্টার জানিয়েছে, হিপনোসিস আরো ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের নতুন সব চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এত বড় অংকের অর্থ ব্যয় করে গানের স্বত্ব কিনে মুনাফার জন্য হিপনোসিস বাজি ধরেছে মিউজিক স্ট্রিমিংয়ের ক্রমবর্ধমান ট্রেন্ডের ওপর। করোনা মহামারীর মধ্যে স্ট্রিমিং থেকে তাদের ভালো আয় হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট গানের কনসার্ট থেকে রয়ালিটি, বার অন্যান্য উৎস থেকেও তারা আয় করছেন। এছাড়া তাদের লক্ষ্য গানগুলোকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন ভিডিও গেমে ব্যবহার করে আয় করা। হিপনোসিস প্রথমে মোটা অংকের টাকা দিয়ে গানের ক্যাটালগ কিনছে একং তারপর গানের স্ট্রিমিং অন্যান্য ব্যবহার থেকে আয় করছে। মার্ক মের্কুরিয়াদিস মনে করেন, আমি গানকে তুলনা করি স্বর্ণ তেলের সঙ্গে। গানের সাফল্য অনুমান এবং এর ওপর ভরসা করা যায়। গান রাজনীতি কিংবা মহামারীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। আপনি যদি সুখে থাকেন তখন ভালো ভালো গান শুনবেন আবার যদি জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে থাকেন তাহলেও গান আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং আপনি একটু মুক্তি পান।

মহামারীর মধ্যে শিল্পীরা ট্যুর, কনসার্ট করতে পারেননি। তাই অনেকে শিল্পী-গীতিকার তাদের গানের ক্যাটালগ বিক্রি করে দিয়েছেন।

 

সূত্র: হলিউড রিপোর্টার বিজনেস ইনসাইডার

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন