মহামারীর পর অন্দরের নকশায় যেসব পরিবর্তন এসেছে

সানজিদা সামরিন

কভিড-১৯ মহামারী আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনযাপনে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা বলা বাহুল্য। মহামারী পরবর্তী সময়ে খেয়াল করলে দেখা যাবে- গোটা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ঘরের রূপ পাল্টে গেছে ইতিমধ্যেই। যেমন- অনেক বাড়ির প্রবেশদ্বারের সামনেই একটা বেসিন রাখা আছে। তার পাশেই একটি শেলফ যেখানে সাজানো স্যানিটাইজার, তোয়ালে, টিস্যু পেপার ও অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার উপকরণ। এ তো কেবল একটি উদাহরণ, এ মহামারী ভবিষ্যতের বাড়ির নকশায়ও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রশস্ততা, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ আলো বাতাস, ব্যক্তিগত অফিস ও উন্মুক্ত স্পেস। মহামারী পরবর্তী সময়ে বাড়ি ও অন্দরের নকশায় যেসব পরিবর্তন এসেছে সেসবের মধ্যে লক্ষণীয় হচ্ছে- 

অভিযোজ্যতা বিন্যাসে নতুনত্ব
বাড়ির সঙ্গে আমরা বাহ্যিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই সম্পৃক্ত। কভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে অধিকাংশ সময় বাড়িতে থাকা থেকে শুরু করে বাড়ির সঙ্গে এই সম্পৃক্ততা যেন আরও বেড়েছে। এখনও অধিকাংশই বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করছেন ও বাড়িতেই অফিস করছেন সেক্ষেত্রে দিনের একটা বড় অংশ বাড়িতেই কাটাতে হচ্ছে।

যার ফলে অন্দরে আরও অনেক পরিষেবা যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যেমন- পড়ার জায়গা, ভাতঘুম, ব্যায়াম ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা গিয়েছে। সুবিধা, নমনীয়তা ও অভিযোজ্যতার কথা বিবেচনায় রেখে নকশাকারেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইন করছেন। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্কিটেকচার ফার্মগুলো খোলা অ্যাপার্টমেন্টে অ্যাডজাস্টেবল দেয়ালের কথা ভাবছেন। যেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে প্রশস্ততা। 

ব্যক্তিগত আউটডোর স্পেস
মহামারীর দিনগুলোয় একটা লম্বা সময়ে গৃহবন্দী হয়ে থাকার কারণে প্রকৃতির প্রতি খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আকৃষ্টতা বেড়েছে। পার্কে অবাধে হাঁটতে যাওয়া বা খোলা স্থানে সময় কাটানো যেন স্বপ্নের মতোই হয়ে উঠেছিল। আর ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে চাওয়ার কারণেই ব্যক্তিগত পরিসরে একটু খোলা আবহকে এখন প্রাধান্য দিচ্ছে মানুষ। যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই নিজ বাড়ির সামনে একটু খোলা পরিসর রাখার পরিকল্পনা করছেন অনেকেই।

প্রাধান্য পাচ্ছে ছাদবাগান, বাড়ির পেছনে ছোট উঠোন, গাড়িবারান্দা ও ব্যালকনি। প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে অনেকেই ভাঁজ করা কাচের দরজা ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে উঠছে।

বাড়িতেই অফিস
কোয়ারেন্টাইনের সময়ে প্রায় সবাইকেই গৃহবন্দী থেকে কর্মস্থলের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। এখনও অনেক কর্মস্থলই হোম অফিস বহাল রেখেছেন। তাছাড়া নিরাপদ থাকতে এবং একইসঙ্গে ক্যারিয়ার গড়তে এখন অনেকেই বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। সেক্ষেত্রে ডাইনিং বা বাড়ির পড়ার টেবিলই হয়ে গেছে কাজ করার জায়গা। যার ফলে ঘরেই ব্যক্তিগত অফিসরুমের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হচ্ছে। অনেক নকশাকার ব্যক্তিগত আউটডোর স্পেস ও হোম অফিসের সন্নিবেশ ঘটানোর কথা ভাবছেন।

যেমন- ব্রাজিলের স্থপতি ইগোর লিয়েলের বারিড স্টুডিও কনসেপ্টে বাড়ির সামনের অংশে আন্ডারগ্রাউন্ডে আলাদা করে অফিস ঘর তৈরি করা হবে যাতে করে কর্মীরা অনুভব করে তারা বাড়ির বাইরে এসে কর্মস্থলে বসেই কাজ করছেন।

পরিচ্ছন্নতার করিডোর
বিভিন্ন কর্মস্থল ও রেস্তোরাঁয় দেখা যায় প্রবেশদ্বারের পাশেই রাখা থাকে জীবাণুনাশক যন্ত্র, স্যানিটাইজার, বেসিন ইত্যাদি। ঠিক এই কনসেপ্টটিই এখন বিভিন্ন বাড়িগুলোয় দেখা যায়। ঘরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে ও সদস্যরা যেন ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকেন সেজন্য অনেক বাড়ির প্রবেশদ্বারের পাশেই রাখা হচ্ছে একটি শেলফ যেখানে বাইরে ব্যবহৃত জুতো রাখা যায়, জ্যাকেট ঝুলিয়ে রাখা যায় ও স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিচ্ছন্ন করে নেয়া যায়।

আধুনিক রান্নাঘর
করোনা পরবর্তীকালে উন্নত বিশ্বে রান্নাঘর নকশার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে স্মার্ট প্রযুক্তি। যেমন বাতি জ্বালানো, ফুসেট বা অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্স চালনায় ব্যবহৃত হচ্ছে ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড প্রযুক্তি।

বাতাস বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া
কভিড-১৯ মহামারীর পর বাতাস বিশুদ্ধকরণের ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। এতে অন্দরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে ও বজায় থাকে বাতাসের বিশুদ্ধতা। বহির্বিশ্বে বায়ু পরিশোধন ব্যবস্থার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এ ব্যবস্থায় বাইরের বাতাসকে পরিশোধন করে অন্দরে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করা হয়। এই ব্যবস্থা ঘরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ধরে রাখতে সহায়তা করে। 

(আর্কিটাইজার অবলম্বনে)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন