করোনার টিকা প্রয়োগ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারব

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম প্রয়োগ হয়েছে গতকাল। বিকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন চিকিৎসক, সাংবাদিক, পুলিশ, সামরিক বাহিনীর সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়।

কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়মতো ভ্যাকসিনটা ক্রয় এবং আনতে পেরেছি। এখন তা প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের মানুষকে আমরা সুরক্ষা দিতে সক্ষম হব। এজন্য আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।

প্রধানমন্ত্রী সময় ভ্যাকসিন দেয়ার এবং গ্রহণে যারা সাহস করে এগিয়ে এসেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি আশা করি আমরা যে যাত্রা করলাম এর মাধ্যমে দেশের মানুষ করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সমর্থন জানানোর জন্য দেশবাসীকেও ধন্যবাদ।

কভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর আমরা সারা বাংলাদেশেই ভ্যাকসিন দেব। আমাদের দেশের মানুষ যাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা পেতে পারে সে ব্যবস্থাই আমরা করব। ভারত সরকারকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। তারা আমাদের ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহারস্বরূপ দিয়েছে। আমরা যে কোটি ৪০ লাখ ডোজ কিনেছি, তার ৫০ লাখ ডোজ এসেছে।

আমরা দিতে শুরু করলে বাকি ডোজও আসতে শুরু করবে। ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না। সবার সহযোগিতা চাই। সবকিছু যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেদিকে সবাই নজর রাখবেন। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা ঐতিহাসিক দিন হলো। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, আমরা যে সীমিত অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করি সেটাই আজকে প্রমাণ হলো।

ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন আসার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো কিন্তু পরীক্ষা করা হয় এবং তারপর দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো কিছু কিছু লোক থাকে, যারা সবকিছুতে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। সবসময় কোনো কিছুই তাদের ভালো লাগে না। যত ভালো কাজই করেন, কিছু মানুষ ভালো লাগে না নামে একটা রোগে ভোগে। রোগের কী চিকিৎসা আছে আমি জানি না। এর জন্য কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে কিনা তাও আমি জানি না। কিছু ভালো লাগে না ধরনের রোগ কিন্তু পত্রিকা দেখলেই পাবেন। সেখানে সবকিছুতে তাদের দোষ টোকানো। এই ভ্যাকসিন আসবে কি আসবে না, এলে পরে এত দাম হলো কেন? এটা চলবে কিনা? দিলে কী হবে? নানা প্রশ্ন তাদের। আমি চাই তারাও সাহস করে আসবে। আমরা তাদেরও ভ্যাকসিন দিয়ে দেব, যাতে তারাও সুরক্ষিত থাকে। কারণ তাদের যদি কিছু হয়, আমাদের সমালোচনাটা করবে কে? সমালোচনার লোকও থাকা দরকার। তারা থাকলে আমরা জানতে পারি আমাদের কোনো ভুলভ্রান্তি হলো কিনা? সেজন্য তাদের আমি সাধুবাদ দিচ্ছি। তাদের সমালোচনা যত হয়েছে, তত আমরা দ্রুত কাজ করেছি।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের পর ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পাঁচজনকে টিকা দেয়া দেখেন। প্রথম টিকা দেয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে। হাসপাতালটির আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনুর ওপর টিকা প্রয়োগ করেন। এরপর একে একে টিকা নেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুত্ফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মো. দিদারুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আরো ২১ জনকে টিকা দেয়া হয়। এদের মধ্যে সাংবাদিক ছিলেন মাসুদ রায়হান পলাশ, মো. আল মাসুম মোল্লা আমিরুল মোমেনিন। বাকিরা হলেন মো. মাজেদুল ইসলাম, সানজিদা সুলতানা, মো, আব্দুল হালিম, মো. হামজা, শাম্মী আকতার, ডা. আল মামুন শাহরিয়ার সরকার, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন, ডা. আফরোজ জাহিন, ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদের খান, মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মো. আব্দুর রহিম, কাজী জসিম উদ্দীন, মোশারফ হোসাইন, রীনা সরকার, মুন্নি খাতুন, মো. আশিফুল ইসলাম দেওয়ান হেমায়েত হোসাইন।

টিকা নেয়ার পর অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, আমি টিকা স্বেচ্ছায় নিয়েছি। এতে ভয়ের কিছু নেই। আমি টিকা নিয়ে দিব্যি ভালো আছি। মানুষ যেন টিকা নিতে আগ্রহী হয় তার জন্যই নিজে টিকা নিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন