দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের লাল কেল্লা দখল

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের কৃষি খাতে সংস্কার এনে প্রণীত আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকরা গতকাল পুলিশি বাধা ভেঙে দিল্লির লাল কেল্লার দখল নেন। ভারতীয় পুলিশের ব্যারিকেড টিয়ার গ্যাসের মধ্য দিয়েই ঐতিহাসিক লাল কেল্লা কমপ্লেক্সের দখল নেন কৃষকরা। খবর বিবিসি আনন্দবাজার।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস ছিল গতকাল। উপলক্ষে গতকাল লাল কেল্লায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কৃষকরা এসে দখল নেন লাল কেল্লার। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এদিন হেঁটে ট্রাক্টরে চড়ে এক শোভাযাত্রায় অংশ নেন কৃষকরা। শোভাযাত্রা চলাকালে অনেক কৃষক দিল্লি পুলিশের নির্ধারণ করে দেয়া রুট ভেঙে অন্য পথ ধরেন। সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে এক কৃষকের মৃত্যু হয়।

বর্তমানে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দিল্লির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

দিল্লিতে কৃষকদের লাল কেল্লা দখল করে নেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর বলছে, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দিল্লি পুলিশের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেছেন।

ভারত সরকারের দাবি, কৃষকরা যে সংস্কার পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন, তার বাস্তবায়ন হলে দেশটির কৃষি খাতের ব্যাপক উদারীকরণ ঘটবে। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে তাদের আয় কমে যাবে। সংস্কার বাতিলের দাবিতে দিল্লির উপকণ্ঠে গত নভেম্বর থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। তাদের দাবি, নিয়ে ভারত সরকারের প্রণীত আইন পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। গত সপ্তাহে আইন স্থগিত করার আশ্বাস দিলেও কৃষকরা বলছেন, তাদের দাবি হলো আইন স্থায়ীভাবে সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।

ভারতে কৃষকদের বর্তমান আন্দোলনটিকে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত সবচেয়ে বড় কৃষক আন্দোলন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন কৃষকরা।

ভারতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বেশ কয়েক দফা বৈঠকের পর আন্দোলনরত কৃষকদের গতকাল শোভাযাত্রা করতে দিতে রাজি হয় দিল্লি পুলিশ। এক্ষেত্রে কৃষকদের শর্ত দেয়া হয়, তাদের শোভাযাত্রা প্রজাতন্ত্র দিবসের বার্ষিক প্যারেডকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। এজন্য কৃষকদের শোভাযাত্রার রুট ঠিক করে দেয় দিল্লি পুলিশ। মূলত দিল্লির উপকণ্ঠের বিভিন্ন সড়কে তাদের রুট ঠিক করে দেয়া হয়েছিল।

তবে শোভাযাত্রা শুরু হলে কৃষকরা ষোড়শ শতকে বানানো দুর্গটির দিকে এগিয়ে যায়। সময় পুলিশের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে কেল্লায় ঢুকে পড়ে তারা। সময় অনেক কৃষক কেল্লার দেয়াল গম্বুজের ওপরে উঠে পড়েন। এমনকি ভারতের জাতীয় পতাকার পাশে নিজেদের পতাকাও উড়িয়ে দেয় তারা।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, কেল্লা কমপ্লেক্স থেকে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সরিয়ে নিতে সমর্থ হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে দিল্লির পরিস্থিতি এখনো বেশ উত্তেজনাপূর্ণ।

বিক্ষুব্ধ কৃষকদের মধ্যে একজন ভারতীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, আমরা এখানে এসেছি মোদি সরকারকে একটি বার্তা দেয়ার জন্য। আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এখন আমরা ফিরে যাব।

আরেক প্রতিবাদী কৃষক বিবিসিকে বলেন, নরেন্দ্র মোদিকে এসব কালাকানুন প্রত্যাহার করতেই হবে।

কৃষক শোভাযাত্রাটি দিল্লির মধ্যাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আইটিও মেট্রো স্টেশন জংশন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভরত কৃষকদের তুমুল সংঘর্ষ বাধে। সময় পুলিশ কৃষকদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারী কৃষকরাও সময় পুলিশের ওপর ট্রাক্টর উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালান। সময় পুলিশের নিক্ষেপ করা কাঁদানে গ্যাসের গোলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক্টর উল্টে গেলে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। আইটিও মেট্রো স্টেশনের ওই সংঘর্ষে দুই পক্ষেই অনেকে আহত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন