‘পি’ ও ‘মেট’ ফোন ব্র্যান্ডও বেচে দিচ্ছে হুয়াওয়ে

বণিক বার্তা ডেস্ক

হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেড পি মেট প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ব্র্যান্ডও বেচে দিচ্ছে। বিভাগ দুটি বেচতে সম্ভাব্য ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গত নভেম্বরে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অনার বিক্রি করে হুয়াওয়ে। এবার পি মেট বিভাগ বিক্রির মাধ্যমে হাই-এন্ড স্মার্টফোন নির্মাণ ব্যবসাকেও বিদায় জানাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট দুই সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে পি মেট স্মার্টফোন ব্র্যান্ড বিক্রির বিষয়ে সাংহাই সরকারের বিনিয়োগ ফার্ম পরিচালিত একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে। তবে অত্যন্ত গোপনীয় হওয়ায় বিষয়টি ঘিরে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, হুয়াওয়ে গত সেপ্টেম্বর থেকেই পি মেট স্মার্টফোন ব্র্যান্ড বিক্রির সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠানটির দুই প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড বিভাগের দাম সম্পর্কে অফিশিয়াল কোনো তথ্য মেলেনি।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুয়াওয়ের পি মেট স্মার্টফোন ব্র্যান্ড বৈশ্বিক বাজারে স্যামসাংয়ের হাই-এন্ড এবং অ্যাপলের আইফোনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আসছিল। পি মেট ব্র্যান্ডের ফোনের ক্যামেরা প্রযুক্তি বৈশ্বিক বাজারে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এক বছরে বৈশ্বিক বাজারে পি মেট সিরিজের যত সংখ্যক ইউনিট ডিভাইস সরবরাহ হয়েছিল তার আর্থিক মূল্য হাজার ৯৭০ কোটি ডলার ছিল।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, পি মেট ব্র্যান্ড বিভাগ বিক্রি বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি হুয়াওয়ে। চলমান আলোচনা সফল হবে এমনটাও নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না। কারণ নিজস্ব কিরিন চিপ দিয়ে এখনো স্থানীয়ভাবে ডিভাইস উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়ে হুয়াওয়ের এক মুখপাত্র বলেন, নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন বিভাগ বিক্রির বিষয়ে গুজবনির্ভর বেশকিছু প্রতিবেদন দেখেছেন। যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এখন পর্যন্ত হুয়াওয়ের ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে সাংহাই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানেন না। যে কারণে নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।

২০১৯ সালের মে মাসে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর থেকে নিজস্ব ডিভাইস উৎপাদন সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। প্রত্যাশা ছিল, জো বাইডেনের শাসন আমলে হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের বিধিনিষেধ কিছুটা হলেও শিথিল হতে পারে। কিন্তু পি মেট ব্র্যান্ড বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ্যে আশার পর অনেকটা পরিষ্কার যে নতুন মার্কিন প্রশাসনের আমলেও খুব একটা সুবিধাজনক ব্যবসায় পরিস্থিতিতে থাকবে না হুয়াওয়ে।

বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে। শুধু তা- নয়, গত বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতার তকমাটিও দখলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে প্রতিষ্ঠানটির কনজিউমার ব্যবসা বিভাগ তীব্র চাপের মুখে রয়েছে। হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিপ প্রযুক্তি সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পরিস্থিতিতে অনেকটা নীরবে বিশ্বের কিছু বাজার থেকে ডিভাইস ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে হুয়াওয়ে। গত নভেম্বরে সাব-ব্র্যান্ড অনার স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগ বেচে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

হুয়াওয়ের সাশ্রয়ী স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগ অনার কিনেছে স্থানীয় হ্যান্ডসেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল চায়নার নেতৃত্বাধীন ৪০টি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম।

২০১৩ সালে হুয়াওয়ের সাশ্রয়ী সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে অনার ব্র্যান্ডের যাত্রা হয়। তবে অনার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়ে এসেছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে শাওমি, অপো ভিভোর মতো ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে অনার। হুয়াওয়ে অনার ব্র্যান্ডের আওতায় দক্ষিণ এশিয়া ইউরোপসহ আরো কিছু বাজারে তুলনামূলক সাশ্রয়ী ফোন সরবরাহ করে এসেছে। অন্যদিকে পি মেট সিরিজের হাই-এন্ড ডিভাইস দিয়ে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। 

বর্তমানে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসা বিভাগকেও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামবিষয়ক চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এসব চুক্তি হুয়াওয়ের সঙ্গে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তুলনামূলক ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বী নকিয়া এরিকসন বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন