দেশে দেশে আবারো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

বণিক বার্তা ডেস্ক

উহানে নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত নিশ্চিত করার পর সময় পেরিয়েছে এক বছরেরও বেশি। সময়ের মধ্যে গোটা বিশ্বেই ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে ভাইরাসটির সংক্রমণজনিত রোগ কভিড-১৯। এরই মধ্যে বাজারে ভ্যাকসিন চলে এলেও তাণ্ডব কবে পুরোপুরি থামবে, সে বিষয়ে বলতে পারছেন না কেউই। বরং চলতি শীতে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করোনার নতুন দুটি স্ট্রেইনের আবির্ভাব মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইকে আরো কঠিন করে তুলেছে। পুনরায় সংক্রমণ বাড়ায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ।

করোনা মোকাবেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ, যুক্তরাজ্য ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন, যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব দেশের সঙ্গে ভ্রমণ চালু করার ঘোষণা দিলেও মহামারী মোকাবেলায় তা আরো কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।

এদিকে করোনার নতুন ধরন যুক্তরাজ্যের জন্য মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বেশ কঠিন করে তুলেছে। গতকালই দেশটির মন্ত্রিসভার সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ানোসহ ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা বাড়ানো বা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা আগতদের কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েল গতকালই নিজ আকাশসীমা বহির্বিশ্বের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটিতে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে এক সপ্তাহ।

করোনার আঘাতে মুহূর্তে ইউরোপের অবস্থা বেশ বিপর্যস্ত। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রাজিল থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরনের আবির্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো গত সপ্তাহে নিজেদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যুক্তরাজ্য থেকে ভ্রমণের ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছিল ইইউ। এক্ষেত্রে শুধু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যাত্রী ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছিল। তবে রোববার থেকে ইইউর বাইরের অন্যান্য দেশ থেকেও অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না দেশগুলো। সেক্ষেত্রেও ইউরোপে রওনা দেয়ার আগ মুহূর্তে কভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার সনদ থাকতে হবে।

গতকালও ইইউর নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বিধিনিষেধ আরো কঠোর করার পক্ষে মত দিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানিসহ জোটটির সদস্যদেশগুলোর প্রতিনিধিরা। কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে আগত যাত্রীদের ইইউভুক্ত দেশে এসে পৌঁছার পর পরীক্ষা করা এবং কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পদক্ষেপ আরো জোরালোভাবে কার্যকর করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন এরই মধ্যে প্রতিবেশী নরওয়েতে যাতায়াতের ওপর তিন সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অসলোয় করোনার ব্রিটিশ স্ট্রেইনের (যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরন) বেশকিছু সংক্রমণ ধরা পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

মহামারীর প্রাদুর্ভাবস্থল চীন করোনা মোকাবেলায় এরই মধ্যে বেশ সফলতা দেখিয়েছে। কিন্তু তার পরেও স্বস্তিতে নেই দেশটির স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। দেশটির হেবেইসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ১১টি এলাকায় সম্প্রতি করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই এলাকাগুলোয় সংক্রমণ থামাতে লকডাউন দেয়া হলেও খুব একটা লাভ হয়নি। রাজধানী বেইজিংয়েও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত সপ্তাহেই সেখানেও আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে হেবেইয়ের কিছু কিছু এলাকায় সংক্রমণ হার কমে আসায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে চান্দ্র নববর্ষের ছুটিকে সামনে রেখে গত সপ্তাহেই দেশটির অভ্যন্তরে ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা ক্ষেত্রবিশেষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন (এনএইচএস)

অস্ট্রেলিয়াও সম্প্রতি প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিউজিল্যান্ডে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অস্ট্রেলিয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অন্যদিকে বর্তমানে বাজারে ভ্যাকসিন চলে এলেও চলতি বছরের পুরো সময়জুড়েই অস্ট্রেলিয়া নানা মাত্রায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রাখতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন