ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বোলারদের দাপটের কারণে আগের দুই ম্যাচে নিজেদের ব্যাটিং শক্তিকে বাজিয়ে দেখার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজই এবার সুযোগ করে দিল স্বাগতিকদের। সেই সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। ব্যাট হাতে অভিজ্ঞ এই চার ব্যাটসম্যানের চারজনই পেয়েছেন অর্ধশতক। বাংলাদেশও পায় উইকেটে ২৯৭ রানের বিশাল সংগ্রহ। যার ওপর দাঁড়িয়ে বোলাররাও সহজেই বের করে নেন ম্যাচটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পথে ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ১২০ রানের বিশাল ব্যবধানে। লক্ষ্য তাড়ায় ক্যারিবীয়রা থামে ১৭৭ রানে। সে সঙ্গে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে আইসিসির ওয়ানডে সুপার লিগের দুই নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া।

আগের দুই ম্যাচে ১৫০ পার করতে না পারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে বাংলাদেশের দেয়া ২৯৮ রানের লক্ষ্যকে শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল রানপাহাড়। সেটি আরো কঠিন হয় দ্বিতীয় ওভারে কিউরন ওট্টেলির বিদায়ে। আগের দুই ম্যাচের মতো এবারো বল হাতে বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য আসে মুস্তাফিজের কাছ থেকে। সামান্য সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন ওট্টেলি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পৌঁছে যায় ৩০ রানে। তবে মুস্তাফিজের ফাঁদে আরো একবার পা দিয়ে বিদায় নেন সুনীল আমব্রিস। নিয়ে তিন ম্যাচের তিনটিতেই মুস্তাফিজের শিকার হলেন আমব্রিস। দলীয় ৪৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধাক্কা দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ঘূর্ণি জাদুতে মিরাজ ফেরান ১১ রান করা মেয়ার্সকে। পরিস্থিতিতে বিপদ কাটানোর লক্ষ্যে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন এনক্রুমাহ বোনার জেসন মোহাম্মদ। তবে দলীয় ৭৯ রানে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জেসন  (১৭) লড়াই চালিয়ে যাওয়া বুনারকে ফিরিয়ে ফের অতিথি শিবিরে ধাক্কা দেন সাইফউদ্দিন। ৩১ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে ফেরান বোল্ড করে। দলীয় ১১৭ রানে জাহমার হ্যামিল্টনকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের বিপর্যয়েও ক্যারিবীয়দের হয়ে কিছু রান পেয়েছেন রভম্যান পাওয়েল। শেষ ম্যাচেও তিনি করেছেন ৪৭ রান। তাকে ফেরান সৌম্য সরকার। এরপর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ১৭৭ রানে। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, সিরিজ সেরা সাকিব আল হাসান।

এর আগে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশকে শুরুতেই ধাক্কা দেন আলজারি জোসেফ। দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন রানের খাতা খোলার অপেক্ষায় থাকা লিটন। বিশ্বকাপে চোখ রেখে এই সিরিজে নাজমুল হোসেন শান্তকে তিন নম্বরে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টকে নিশ্চিতভাবেই খুশি করতে পারেননি শান্ত। সাকিবের পছন্দের জায়গায় খেলতে নেমে পারলেন না নিজেকে প্রমাণ করতে। যদিও ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েছিলেন শান্ত, কিন্তু সেই শুরুকে টেনে নিতে পারেননি বেশি দূর। ৩০ বলে ২০ রান করে কাইল মেয়ার্সের শিকার হয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। ৩৮ রানে উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে তোলার দায়িত্ব এসে পড়ে তামিম সাকিবের কাঁধে। দুজনই ধাক্কা কাটাতে খেলছিলেন সতর্ক হয়ে। শট খেলার চেয়ে স্ট্রাইক রোটেট করাতেই দিয়েছেন অধিক গুরুত্ব। এর মাঝে নিজের ৪৯তম ওয়ানডে ফিফটিও তুলে নেন তামিম। ফিফটিতে পৌঁছে তামিম চেষ্টা করেছিলেন আগ্রাসী হওয়ার। ছয় মেরে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন, কিন্তু জোসেফের শর্ট বলের ফাঁদে নিজের উইকেট হারান তামিম। ৬৪ রান আসে বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়ে নিজের ফিফটি তুলে নেন সাকিবও। তবে ইনিংসটি মোটেই সাকিবসুলভ ছিল না। রান তুলতে কিছুটা সংগ্রামই করতে হচ্ছিল তাকে। ফিফটি করে ইনিংসও আর বড় করতে পারেননি, বোল্ড হয়েছেন রেমন রেইফারের বলে।

সাকিবের বিদায়ও অবশ্য লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি বাংলাদেশকে। মুশফিক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলকে নিয়ে যান বড় সংগ্রহের দিকে। প্রথমদিকে সিঙ্গেল নিয়ে মুশফিককে স্ট্রাইক দেয়ায় মনোযোগ দিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৪৭ বলে তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হওয়া মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ বলে চার ছক্কায় ৬৪ রান। মুশফিকের বিদায়েও থামেননি মাহমুদউল্লাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের শাসন করে ৪৩ বলে চার ছয়ে করেন অপরাজিত ৬৪ রান। মূলত মাহমুদউল্লাহর ইনিংসই বাংলাদেশকে তিনশর কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে জোসেফ রেইফার দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।

চট্টগ্রামে দুই দলের মধ্যকার প্রথম টেস্ট শুরু হবে ফেব্রুয়ারি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন