কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল পুনর্বাসন প্রকল্প

মেয়াদ শেষে কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ

আফরোজ আহমদ, মৌলভীবাজার

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার পণ্য পরিবহন আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ২০১০ সালে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালে ১০ আগস্ট শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নজরদারির অভাব কাজে ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করার জন্য আরো সময় বাড়ানো হয়েছে দেড় বছর। যদিও বর্ধিত সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া-শাজবাজপুর রেল সেকশন চালু করা হয় ১৮৯৬ সালের ডিসেম্বর। ১৯৫৮-৬০ সালে ওই রেলপথটি পুনর্বাসন করা হয়। রেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২০০২ সালের জুলাই বন্ধ হয়ে যায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল যোগাযোগ। এতে কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহনে বিপাকে পড়ে।

২০১০ সালের পর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সহজে পণ্য পরিবহন আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে বন্ধ লাইনটি চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেকে) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত প্রকল্প পরবর্তিতে সংশোধন করে ৫৪৪ কোটি টাকা ধরা হয়। প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ শতাংশ বাংলাদেশ এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে সরকার। কাজের ঠিকাদারি পায় ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানি।

বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৮ সালে ১০ আগস্ট থেকে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। কাজের মেয়াদ ধরা হয় দুই বছর। প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাহবাজপুর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইন মিলে মোট ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা হবে। ব্রডগেজ মিটার গেজের দ্বৈত লাইন ছাড়া রয়েছে ছয়টি স্টেশন এবং ৫৯টি সেতু কালভার্ট নির্মাণ। গত বছরে ডিসেম্বরে কাজের মেয়াদ শেষ হয়। এই সময়ে মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে কুলাউড়া জুড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন রেলব্রিজ ভাঙার কাজ করছেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের লাইন পরিষ্কার করে মাটির কাজ করা হচ্ছে। পুরনো লাইনের ইট পাথর ট্রাকে করে সরিয়ে নিয়ে লাইনের পাশে রাখা হচ্ছে। এক্সক্যাভেটর অপারেটর মো. সিরাজ জানান, তিনি আগাছা পরিষ্কার করে পুরনো পাথর তুলে দিচ্ছেন। ট্রাক্টরে করে পাথরগুলো লাইনের পাশে রাখা হচ্ছে। পরে রুলার দিয়ে লাইন শক্ত করা হচ্ছে। কুলাউড়া স্টেশন থেকে তারা এক সপ্তাহে প্রায় সাত কিলোমিটার কাজ করেছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দী রেল নির্মাণ কোম্পানির ফিল্ড সুপার ভাইজার মো. মন্তাজ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দীর্ঘদিন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছেন। বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কিনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত কাজ শেষ করতে শ্রমিকের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

রেলওয়ে কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. জুয়েল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি এক-তৃতীয়াংশের কম। করোনার কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে প্রকল্পের কাজ। বর্তমানে ব্রিজ কালভার্ট এবং লাইনে মাটির কাজ চলছে। এছাড়া ছয়টি স্টেশনের মধ্যে চারটির নির্মাণ কাজ চলছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব মনে করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন