নন-বাসমতী চাল

ভারত থেকে রফতানি কোটি টন ছাড়াতে পারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছে ভারতের চাল রফতানি খাত। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি চাহিদা ভারতীয় চাল রফতানি বাজারকে ক্রমেই চাঙ্গা করে তুলছে। ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ মৌসুমে ভারত থেকে শুধু নন-বাসমতী চাল রফতানি এক কোটি টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইআরইএ) সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। প্রতি মৌসুমে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে কোটি ২০ লাখ থেকে কোটি ৩০ লাখ টন চাল রফতানি করে। এর মধ্যে বাসমতী নন-বাসমতী দুই ধরনের চাল রয়েছে। এআইআরইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ৮০ লাখ টন নন-বাসমতী চাল রফতানি হয়েছিল। দেশটির ইতিহাসে এটাই এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি নন-বাসমতী চাল রফতানির রেকর্ড। পরের ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে নন-বাসমতী চাল রফতানির পরিমাণ ৫০ লাখ ৪০ হাজার টনে নেমে আসে।

তবে করোনা পরিস্থিতি এবারের ২০২০-২১ মৌসুমে করোনা মহামারী পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে। এআইআরইএর প্রেসিডেন্ট বি কৃষ্ণ রাও বলেন, এবারের মৌসুমে নভেম্বর পর্যন্ত ৭০ লাখ টন নন-বাসমতী চাল রফতানি করেছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। মৌসুম শেষে নন-বাসমতী চাল রফতানির সম্মিলিত পরিমাণ এক কোটি টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় নন-বাসমতী চাল রফতানিতে নতুন রেকর্ড হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

চাল রফতানি বাজারে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ থাইল্যান্ড ভিয়েতনাম। করোনা মহামারীর মধ্যে দুটি দেশের তুলনায় ভারতের বাজারে চালের রফতানি মূল্য তুলনামূলক কম রয়েছে। আর এটাই এবারের মৌসুমে ভারতীয় নন-বাসমতী চাল রফতানি বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিষয়ে বি কৃষ্ণ রাও বলেন, ভিয়েতনামে প্রতি টন নন-বাসমতী চালের রফতানি মূল্য ৪৬০-৪৭০ ডলারের মধ্যে রয়েছে। থাইল্যান্ডে দাম টনপ্রতি ৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে। এর বিপরীতে ভারতের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য নন-বাসমতী চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭০-৩৮০ ডলারে। এর জের ধরে আমদানিকারকরা ভারতীয় চাল আমদানি বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা ভারতের নন-বাসমতী চালে রফতানিকে চাঙ্গা করে তুলেছে।

দাম তুলনামূলক সস্তা থাকার কারণে করোনাকালে বেশ কয়েকটি সুখবর শুনেছে ভারতের চাল রফতানি খাত। সীমান্ত বিরোধ বজায় থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারত থেকে নন-বাসমতী চাল আমদানির চুক্তি করেছে চীন। বাংলাদেশ সরকার তিন বছর পর ভারত থেকে নন-বাসমতী চাল আমদানি শুরু করেছে। একই সঙ্গে প্রায় তিন দশক পর ভারত থেকে নন-বাসমতী চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভিয়েতনাম। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ হওয়ার পরও ভিয়েতনাম গত বছর ভারত থেকে খাদ্যপণ্যটি আমদানির চুক্তি করেছে।

এআইআরইএর নির্বাহী পরিচালক বিনোদ কাউল বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে ভারতের চাল রফতানি খাত নিজেকে কার্যকর টেকসই প্রমাণ করেছে। অনেক দেশের মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোয় আগে থেকেই ভারতীয় চালের রফতানি চাহিদা বাড়তির দিকে ছিল। এখন চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবারের মৌসুমে ভারতীয় নন-বাসমতী চাল রফতানিতে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।

ভারতীয় চাল রফতানিকারক অশ্বীন শাহ বলেন, লকডাউনের সময় শ্রমিক পরিবহন সংকটের কারণে ভারত থেকে চাল রফতানি কিছুটা শ্লথ হয়ে এসেছিল। তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে। মহামারীর কারণে ভিয়েতনাম থাইল্যান্ড খাদ্যপণ্যটির রফতানি সাময়িক বন্ধ রাখলে সেই সুযোগ কাজে লাগান ভারতীয় রফতানিকারকরা। এর ওপর তুলনামূলক সস্তা দাম শাপে বর হয়েছে। এসব কারণ ২০২০-২১ মৌসুমে ভারত থেকে নন-বাসমতী চাল রফতানির পরিমাণ এক কোটি টনে উন্নীত করতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন