সুরক্ষা মানদণ্ড নিশ্চিতের আগে ফাইভজি সম্প্রসারণ নয়!

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, স্বল্প পরিসরে হলেও পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির ব্যবহার বিশ্ববাসীর সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ফাইভজি বিশ্ববাসীর জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তবে নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসীর সামনে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হবে। যে কারণে ফাইভজি প্রযুক্তির সুরক্ষা মানদণ্ড নিশ্চিত হওয়ার আগে বৈশ্বিক সম্প্রসারণ খুব একটা ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফাইভজি প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন উইলিয়াম ফ্র্যাঙ্ক। বিশেষজ্ঞের মতে, ফাইভজির জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিটার ঘনত্বের অর্থ হলো আরো বেশি মানুষ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তড়িত্চুম্বকীয় ক্ষেত্রগুলোর (আরএফ-ইএমএফএস) সংস্পর্শে আসবে। এই স্তরের আরএফ-ইএমএফএস স্বাস্থ্যের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হবে।

জেনারেল অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিটি হেলথে প্রকাশিত একটি মতামতের উদ্ধৃতি দিয়ে জন উইলিয়াম ফ্র্যাঙ্ক জানান, ফাইভজি অতীতের তুলনায় অনেক বেশি ফ্রিকোয়েন্সির ( থেকে ৩০০ গিগাহার্টজ) রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। এছাড়া এটি উচ্চতর ডাটা ট্রান্সমিশন সক্ষম করতে নতুন প্রযুক্তি এবং সুরক্ষার দিক থেকে তুলনামূলকভাবে অপরিক্ষীত। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হলো, ফাইভজি নেটওয়ার্কে সাধারণত ১০০ থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে ট্রান্সমিশন বুস্টিং সেল অ্যান্টেনার প্রয়োজন হয়। এটি কম ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভ ব্যবহার করা পুরনো টুজি, থ্রিজি ফোরজির প্রযুক্তির চেয়ে অনেক বেশি ঘন।

অধ্যাপক জন উইলিয়াম ফ্র্যাঙ্ক ব্যাখ্যা করেন, বিদ্যমান ফোরজি সিস্টেমগুলো প্রতি বর্গকিলোমিটারে হাজার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা ডিভাইসগুলোয় সংযোগ করতে পারে। অন্যদিকে ফাইভজি সিস্টেম প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০ লাখ ডিভাইস সংযুক্ত করবে। এটি ডাটা স্থানান্তরের গতি পরিমাণ বাড়িয়ে তুলবে। ডাটা স্থানান্তরের বিভিন্ন ধরন প্রতিটিই কিছু জৈবিক প্রভাব সৃষ্টি করে। যে কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, আরএফ-ইএমএফএসের ল্যাব ডাটার সাম্প্রতিক পর্যালোচনাগুলো ইঙ্গিত দেয়, এক্সপোজারগুলো প্রজনন, ভ্রুণ, অনকোলজিক্যাল, নিউরোসাইকিয়াট্রিক, ত্বক, চোখ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ বিস্তৃত শারীরিক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বে কভিড-১৯ সংক্রমণের সঙ্গে ফাইভজির সংযোগের কথা বলা হলেও সেটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উইলিয়াম ফ্র্যাঙ্ক বলেন, বর্তমান ফাইভজি সম্প্রসারণের জন্য একটি নতুন সম্ভাব্য বিস্তৃত মানুষের সংস্পর্শের সুরক্ষা নিয়ে উল্লেখযোগ্য সন্দেহের কারণেই সাবধানতা নীতি অবলম্বন করা উচিত। সন্দেহজনক প্রতিকূল স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলোর জন্য প্রযুক্তিকে বৈজ্ঞানিক তদন্তের মুখোমুখি করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন সেলফোন অপারেটর যখন ফাইভজি প্রযুক্তিতে সেবাদানে জোরেশোরে কাজ করছে, তখন বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফাইভজি যেকোনো স্থানে বসে অফিসের কাজ পরিচালনা এবং শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে মুহূর্তে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। ফোরজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতেও এসব কার্যক্রম চালছে। কিন্তু ফাইভজিতে সামগ্রিক কার্যক্রম আরো সহজ হবে। ফাইভজির মাধ্যমে উচ্চমাত্রার মিথস্ক্রিয়াসম্পন্ন ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরি করা সম্ভব হবে এবং দেশের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো কনটেন্ট স্ট্রিমিং করা যেতে পারে, যা কিনা সহজেই গ্রাম শহর এলাকার ব্যবধানকে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে যা হবে তা হলো দূরবর্তী অবস্থানে বসে শিক্ষকদের ভিডিও দেখার পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা রিয়েল টাইমেই ক্লাসগুলোয় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

ফাইভজির সহায়তায় নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা খাত তৈরি করা সম্ভব। যেখানে দূরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকেও প্রবেশ করা যাবে। এর মধ্য দিয়ে স্বানীয় একটি ফোন বুথকে সরাসরি যুক্ত করা যেতে পারে বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে। ফলে রিমোট ডায়াগনস্টিক এবং টেলিসেবা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন