নিউইয়র্কের ভবন থেকে ট্রাম্পের নাম মুছে ফেলার দাবি

বণিক বার্তা অনলাইন

ক্ষমতা চিরদিন থাকে না, আর ক্ষমতা যাওয়ার সঙ্গে কমে যায় দাপটও। ঠিক তেমনটাই ঘটছে আলোচিত-সমালোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেলায়। গেল চার বছর ক্ষমতায় থাকাকালে নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটনজুড়ে বেশ কিছু বড় ভবনের নামকরণ করা হয়েছে সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে। তবে তিনি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার সপ্তাহ পার হতে না হতেই সেই নাম মুছে ফেলার দাবি জানিয়েছেন ভবনের বাসিন্দারা। 

ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, এমন দাবিতে ওই এলাকার একটি ভবনের বাসিন্দারা বেশ জোরেশোরেই নেমেছেন। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকেও বসতে হয়েছে ট্রাম্প প্যালেসের অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের। ভবনের বর্তমান ব্যবস্থাপক অবশ্য নাম পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার অশ্বাস দিয়েছেন। ব্লুমবার্গকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভবনের এক বাসিন্দা। 

অবশ্য ট্রাম্পের নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে পুনরায় ব্র্যান্ডিং করার ঘটনা এটাই প্রথমবার নয়। যেমন ২০১৭ সালে ‘ট্রাম্প সোহো’ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ডমিনিক করা হয়। তারও আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আপার ওয়েস্ট সাইডের কয়েকটি ভবনের প্রবেশদ্বারগুলোতে ঝুলে থাকা বৃহৎ ট্রাম্প প্যালেসের নামফলকগুলো নামিয়ে ফেয়া হয়। এছাড়া ট্রাম্প প্যালেসের দক্ষিণে কো-অপ আট ব্লকের ট্রাম্প প্লাজা দীর্ঘদিন ধরে নাম পরিবর্তনের বিষয় বিবেচনা করছে। 

২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই ভবন থেকে তার নাম বাদ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা ওঠে। নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট অ্যাটর্নি অ্যাডাম লেইটম্যান বেইলি বলেন, ট্রাম্পের নাম থাকা প্রতিটি ভবনের বাসিন্দাদের থেকে আমি ফোন পেয়েছি। তারা তাদের ভবন থেকে ট্রাম্পের নাম অপসারণ করতে চান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব বেশি জনপ্রিয়তা পাননি। এজন্য ট্রাম্পের নাম থাকা ভবনগুলোর দাম অনেক কমে গেছে। 

৮৮ বছর বয়সী লোইস মিলার পাঁচ বছরের জন্য ট্রাম্প প্যালেসে একটি কন্ডো ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু বাসায় উঠার আগে তিনি বুঝতেই পারেননি যে এটি ট্রাম্পের সম্পত্তি। তিনি বলেন, এটি দেখার পর আমি বলে উঠেছিলাম, ওহ মাই গড, আমি এখানে থাকি? নাম মুছে ফেলার বিষয়টি ভালো দেখায় না। তবে তার নামটি না থাকলে আমি খুব খুশি হবো।

গত ৬ জানুয়ারির মার্কিন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গার পর ট্রাম্পের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গত দুই সপ্তাহ ধরে ডয়েচে ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক সহ কয়েকটি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পকে বর্জন করেছে। এছাড়া আগামী বছরে নিউ জার্সিতে ট্রাম্পের মালিকানাধীন মাঠে নির্ধারিত একটি টুর্নামেন্ট বাতিল করেছে পিজিএ অব আমেরিকা। লাখ লাখ অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সামাজিক মাধ্যমগুলো থেকেও বহিষ্কৃত হয়েছেন ট্রাম্প। 

এমন পরিস্থিতিতে কিছু ভবনের মালিকরা আশঙ্কা করছেন, ভবনে ট্রাম্পের নাম রাখার মাধ্যমে তাদের বিনিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্র্যান্ডিং বিশেষজ্ঞ এরিক শিফার বলেন, এটি যে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক উদ্যোগের জন্যই বিপদ। কারণ শুধুমাত্র নামের কারণেই তারা কিছু গ্রাহক হারাতে পারেন। 

ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের একজন মুখপাত্র এ বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক বৈষম্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করা হবে বলেও জানান তিনি। 

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে ম্যানহাটন সম্পত্তি বিক্রেতারা এমনিতেই কঠিন সময় পার করছেন। এরমধ্যে এটি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। 

আবাসিক ভবনের পাশাপাশি নিউইয়র্কে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন দুই আইস স্কেটিং রিংকের পাশাপাশি সেন্ট্রাল পার্কে ক্যারোসেল এবং বোনস্কে একটি গলফ মাঠ পরিচালনা করে। এর আগে ওয়েস্ট সাইড হাইওয়ের সইনবোর্ড থেকে ট্রাম্পের নাম সরিয়ে দিতে ডিসেম্বরে শুরু হওয়া একটি পিটিশনে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন