বৈশ্বিক এলপিজি বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তনের রাশ টানা পরিবেশ সচেতনতার জের ধরে তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে দেশে দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিস্তৃত হচ্ছে জ্বালানি পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। একই সঙ্গে এলপিজির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে পোক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য। ধারাবাহিকতায় গত বছর বিশ্বজুড়ে রফতানি হওয়া এলপিজির ৩৩ শতাংশ এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। খবর হেলেনিকশিপিংনিউজডটকম অয়েলপ্রাইসডটকম।

এলপিজি রফতানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলক নবীন দেশ। ২০১১ সালে দেশটি জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাজারে প্রবেশ করে। এরই মধ্যে এলপিজি রফতানিতে নিজেদের আধিপত্যের জানান দিয়েছে ওয়াশিংটন। কয়েক বছরের মধ্যে দেশটি এলপিজি রফতানিকারকদের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। রেফিনিটিভ ভ্যাসেল ট্র্যাকিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে কোটি ৭১ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ১৫ দশমিক শতাংশ।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে কোটি লাখ টন এলপিজি রফতানি করেছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে রেফিনিটিভ ট্র্যাকিং। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি রফতানি বেড়েছে ৬৩ লাখ টন। এর মধ্য দিয়ে গত বছর এলপিজির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ৩৩ শতাংশ এককভাবে জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এলপিজির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর আধিপত্য বেশি দেখা যায়। তবে গত বছর জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে অঞ্চলের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। রেফিনিটিভ ভ্যাসেল ট্র্যাকিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে কোটি ৪৩ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে।

একই সময়ে কাতার থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৯৯ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে রেফিনিটিভ ট্র্যাকিং। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সময় সৌদি আরব থেকে রফতানি হয়েছে ৭৬ লাখ টন এলপিজি। আর বিদায়ী বছরে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া সব মিলিয়ে ৬০ লাখ টন এলপিজি রফতানি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি হওয়া এলপিজির প্রধান ক্রেতা যথাক্রমে জাপান দক্ষিণ কোরিয়া। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মার্কিন মুলুক থেকে জাপানে জ্বালানি পণ্যটির রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক শতাংশ কম। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এলপিজি রফতানি আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক শতাংশ কমে ৫৫ লাখ টনে নেমে এসেছে।

তবে রেফিনিটিভ ট্র্যাকিং জানিয়েছে, বিদায়ী বছরে চীনের বাজারে সব মিলিয়ে ৫২ লাখ টন এলপিজি রফতানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগের বছর দেশটি থেকে চীনে সাকল্যে তিন লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ৪৯ লাখ টন।

যুক্তরাষ্ট্রের চারটি উপকূল দিয়ে সবচেয়ে বেশি এলপিজি রফতানি হয় বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে রেফিনিটিভ ট্র্যাকিং। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরে দেশটির হিউস্টন উপকূল দিয়ে সব মিলিয়ে কোটি ৭৩ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে। এর পরই রয়েছে টেক্সাসের মেক্সিকো উপসাগরের পার্শ্ববর্তী ফ্রিপোর্ট বন্দর। উপকূল দিয়ে গত বছর সব মিলিয়ে ৫৮ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে।

বিদায়ী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বেউমন্ট উপকূল দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে রেফিনিটিভ ট্র্যাকিং। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া উপকূল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩৯ লাখ টন এলপিজি রফতানি হয়েছে। বাকি এলপিজি দেশটির অন্যান্য উপকূলীয় বন্দর দিয়ে রফতানি হয়েছে।

রেফিনিটিভ ট্র্যাকিংয়ের মুখপাত্র বানচেরো কস্তা বলেন, বিদায়ী বছরে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী এলপিজির বৈশ্বিক রফতানিতে শ্লথতা বজায় রেখেছিল। এর পরও যুক্তরাষ্ট্রের এলপিজি রফতানি খাত বেশ ভালো করেছে। মহামারীকালে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

এদিকে রেফিনিটিভ ট্র্যাকিংয়ের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এলপিজির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের (যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া) সম্মিলিত পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ টন। গত বছর জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কোটি ৪৮ লাখ টনে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে এলপিজির সম্মিলিত রফতানি কমেছে দশমিক শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন