সিপিডি-এমআইবি জরিপ

আর্থিক ব্যবস্থাপনায় খুবই দুর্বল পোশাক শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯-এর মতো আপদে পোশাক খাতে লাখ ৫৭ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। বড়রাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশেরই কোনো আপত্কালীন এবং তাত্ক্ষণিক সংকট মোকাবেলার আর্থিক পরিকল্পনা ছিল না। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ক্রয়াদেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে ৫৬ শতাংশ কারখানার। গতকাল এক সংলাপে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

কভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধার: জরিপের ফলাফল শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) যৌথ গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। সংলাপে সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন। সমাপনী বক্তব্য দেন সিইডির উপদেষ্টা অধ্যাপক রহিম বি তালুকদার। মিসামি গার্মেন্টস বিজিএমইএর পরিচালক মিরান আলী সংলাপে আলোচক হিসেবে ছিলেন।

সংলাপটির সঞ্চালনা করেন এমআইবির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হাসিব। প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি গবেষণার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তথ্যপ্রাপ্তির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন।

ছোট কারখানাগুলোর দুর্বলতা পোশাক খাতের কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশের রফতানিমুখী পোশাক খাতটি কভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। যদিও সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কারণে চ্যালেঞ্জ উত্তরণে কারখানাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। কভিড সংকট মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক ক্রেতার ওপর নির্ভরশীলতা আপদ মোকাবেলায় প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়ও উল্লেখ করেছে সিপিডি। খাতের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটির ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট, পোশাক সংগঠনের সদস্য নয় এমন এবং নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রামের কারখানাগুলোয় অধিক পরিমাণ সমস্যা লক্ষ করা যাচ্ছে। ঋণপ্রাপ্তির জটিলতার কারণে বেশির ভাগ ছোট কারখানা ঋণের জন্য আবেদন করেনি। ৯০ শতাংশ বড় কারখানার বিপরীতে মাত্র ৪০ শতাংশ ছোট কারখানা আবেদন করে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রামের কারখানাগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যাংকের আমানতের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল।

সূচনা বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন বলেন, মোট ৬১০টি পোশাক কারখানায় জরিপ পরিচালনা করা হয়। ফলে কভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধারকে বিশ্লেষণ করা সহজতর হবে।

সংলাপে মূল প্রতিবেদনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক . খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার আবেদন প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। সদস্য নয় এমন কারখানাগুলোকে অনতিবিলম্বে সদস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার প্রক্রিয়াটি কমপ্লায়েন্সে অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। বিকেএমইএ বিজিএমইএকে দায়িত্ব নিয়ে সামনে এসে শ্রমিকদের তালিকা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিকে আরো জোর দিতে হবে।

পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের অবদানের কথা তুলে ধরে সংলাপের বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য শিরীণ আখতার বলেন, কভিডের সময়কালে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলেও পোশাক শিল্প ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সময়ে আমরা অনুধাবন করেছি, আপত্কালের জন্য আমাদের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুশাসনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

সংলাপের অতিথি বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেশির ভাগ শ্রমিকের পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে সিপিডির প্রস্তাবনার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বিজিএমইএর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি আরো সহজ করতে হবে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে এনামুল হক বলেন, গবেষণায় সার্বিক পরিস্থিতি উঠে এলেও করোনার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে আলাদা করে দেখার সুযোগ রয়েছে।

শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা সর্বাগ্রে ভেবে দেখতে হবে।

সংলাপের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান বলেন, সোবহান কভিড পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষা বীমার প্রস্তাব করেন, যেখানে মালিক, শ্রমিক, সরকার, ক্রেতা এবং উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন