দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ শুরু হচ্ছে আগামী বুধবার। রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে একযোগে পরীক্ষামূলকভাবে এ টিকা প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। তবে দেশব্যাপী টিকা প্রয়োগের জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সরকারিভাবে ক্রয়কৃত টিকা ভারত থেকে দেশে পৌঁছতে দু-একদিন দেরি হতে পারে।
২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এ সময় চিকিৎসক-নার্স, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিকসহ অন্য পেশার আরো ২৪ জনকে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান।
রাজধানীর একটি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের জানান, বুধবার প্রথম টিকা প্রয়োগের পরদিন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা প্রয়োগ করা হবে। এসব হাসপাতালে ৫০০ জনকে টিকা দিয়ে তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পর্যবেক্ষণ শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বণিক বার্তাকে জানান, ভারত থেকে গত ২১ জানুয়ারি পাওয়া উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েই প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হবে। সরকারিভাবে কেনা টিকা হাতে পাওয়ার পর দেশব্যাপী টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে। ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ফ্লাইট শিডিউল জানা যায়নি। ফলে দু-একদিন দেরি হতে পারে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কোন চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষামূলক টিকা দেয়া হবে, তার তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পেয়েছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। স্বেচ্ছায় যারা পরীক্ষামূলক টিকা নিতে আগ্রহী হয়েছেন, তাদেরই দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে টিকা প্রয়োগের জন্য শুরুতে ৩২৪টি স্থান নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে ৩০০টিরও কম স্থান। ঢাকাসহ সব বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে আজ এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে। হাসপাতালগুলোয়ও এখন পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষামূলক এ টিকা প্রয়োগের পর পর্যবেক্ষণ শেষে সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিদিন সারা দেশে ২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। এতে প্রথম মাসেই টিকার আওতায় চলে আসবে ৬০ লাখ মানুষ। টিকা নেয়ার জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপে নিবন্ধন শুরু হবে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) এক কর্মকর্তা জানান, টিকার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম রয়েছে। মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে এবং গুজব ঠেকাতে জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ও বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে টেলিভিশনেও বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ রয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার টিকা প্রয়োগে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাড সিরিঞ্জ (দশমিক ৫ মিলি) মডেলের ৩ কোটি ৩০ লাখ সিরিঞ্জ ক্রয়ের কার্যাদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সিরিঞ্জ কিনতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান মোট পাঁচ ধাপে এ সিরিঞ্জ সরবরাহ করবে। ৬৬ লাখ করে পাঁচ ধাপের এ সিরিঞ্জের প্রথম চালান ৩১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরো ৬৬ লাখ সিরিঞ্জ সরবরাহের কথা রয়েছে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর তৃতীয় ধাপে ৩০ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ১৬ মে ও শেষ ধাপে ২০ মে সিরিঞ্জ সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি সিরিঞ্জের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা করে।
সরকারিভাবে ক্রয়কৃত টিকার প্রথম চালান দিয়েই সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালাতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা দরকার। এর জন্য কাজ চলছে। দু-একদিনের মধ্যে সব ডিসি ও ইউএনওর কাছে আদেশ পাঠানো হচ্ছে। তারা নির্দেশমতো কাজ শুরু করবেন।