মূল্য সংযোজন কর আইন

ব্যবসা সহায়ক পরিবর্তন ও কিছু ভাবনা

ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ

২০১২ সালে প্রণীত মূল্য সংযোজন কর সম্পূরক শুল্ক আইন একটি যুগান্তকারী আইন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম আইনটি বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহজীকরণে কিছু আইন বিধিগত পরিবর্তন আনয়ন করা হয়েছে। প্রবন্ধে মূল্য সংযোজন কর সম্পূরক শুল্ক আইনে আনীত ব্যবসাবান্ধব পরিবর্তনের কতিপয় বিষয় আইনের বিষয়ে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা তুলে ধরা হলো।

অর্থ আইন ২০১২-এর মাধ্যমে মূল্য সংযোজন কর সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২-এর ধারা ১২-তে সংশোধনী আনয়নপূর্বক স্ব-উদ্যোগে নিবন্ধনযোগ্য তালিকাভুক্তির যোগ্য ব্যক্তিকে নিবন্ধন তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা কমিশনারের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। পরিবর্তনের ফলে নিবন্ধনের যোগ্য কিন্তু অনিবন্ধিত রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় এনে কর আদায় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত পণ্যের ব্যাপারে বর্তমান আইনে কিছু ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা ২০১২ সালের মূল আইনে ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত পণ্যের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত পণ্যের নিষ্পত্তিতে প্রতিকার পাবেন। একইভাবে অব্যবহূত বা ব্যবহার অনুপযোগী উপকরণ নিষ্পত্তির বিধান আইন বা বিধিতে ছিল না, যা বর্তমান বাজেটে সংযোজন করা হয়েছে। বিধান সংযোজনের ফলে করদাতারা সহজেই ধরনের উপকরণ নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

অর্থ আইন ২০২০ দ্বারা ধারা ৪৬- সংযোজন করে পরিবহন সেবাসংক্রান্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যয়ের ওপর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত দেয়ার বিধান সংযোজন করা হয়েছে। নতুন (২০১২) সালের আইনে প্রভিশন ছিল না। বিধান সংযোজনের ফলে আইনটি অধিকতর ব্যবসাবান্ধব হলো; এতে ব্যবসার ব্যয় কমবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের ফাইন্যান্স অ্যাক্টের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত ন্যায়-নির্ণয়নের বিধান [ধারা ৮৬()] আইনে সংযোজন করা হয়েছে। বিধান সংযোজনের ফলে অনিয়মিত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

বর্তমান ভ্যাট আইনে হ্রাসকারী সমন্বয় বৃদ্ধিকারী সমন্বয়ের ব্যবস্থা থাকায় প্রদেয় কর হ্রাস-বৃদ্ধির পরিস্থিতি উদ্ভব হলে তা করা সহজ হবে। তবে হ্রাসকারী সমন্বয় বৃদ্ধিকারী সমন্বয়ের কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন ধারা (৭১)-এর বৃদ্ধিকারী সমন্বয়গুলোর একটি হলো নিবন্ধিত হওয়ার পর বৃদ্ধিকারী সমন্বয় নিবন্ধিত হওয়ার পর বৃদ্ধিকারী সমন্বয় কী পরিস্থিতিতে হতে পারে, তার ব্যাখ্যা নেই। কী পরিস্থিতিতে প্রদেয় কর নির্ণয়ে বৃদ্ধিকারী সমন্বয় হবে তা বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে আইন বাস্তবায়ন সহজ হবে। যেমন নিবন্ধিত হওয়ার পর বৃদ্ধিকারী সমন্বয় হতে পারে যদি বিক্রি রেকর্ড অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রমাণ করে যে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হওয়ার আগে থেকে, ধরা যাক ছয় মাস আগে থেকেই ভ্যাট আরোপযোগ্য কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং নিবন্ধনসীমার উপরে এর টার্নওভার ছিল। সেক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপযোগ্য কার্যক্রম পরিচালনার কারণে বকেয়া ভ্যাটের জন্য বৃদ্ধিকারী সমন্বয় করা হতে পারে।

মূসক আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণ অতি প্রয়োজন। পণ্যের ক্ষেত্রে অবরোহী-আরোহী পদ্ধতিতে ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি স্থল, উৎপাদন স্থল বা ব্যবসায় স্থল থেকে সংশ্লিষ্ট পণ্যমূল্য বা অভিন্ন পণ্যমূল্য কিংবা সমজাতীয় পণ্যমূল্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণের নিয়ম রয়েছে। বাস্তবে উৎপাদন স্থল বা ব্যবসায় স্থলে পণ্যমূল্য বা অভিন্ন/সমজাতীয় পণ্যমূল্য পাওয়া যায় না অথবা তা সংরক্ষণ করার কোনো কারণও নেই। তাই বাজারমূল্য নির্ধারণের সুবিধার্থে বর্তমান বাজেটে খুচরা গড় বাজারমূল্য নির্ধারণের বিধান সংযোজন করা হয়েছে। ফলে ন্যায্য বাজারমূল্য নির্ধারণ করা সহজ বাস্তবভিত্তিক হবে।

বর্তমান বাজেটে উপকরণ-এর সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করায় এবং উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন আইটেমের ওপর যেমনবিনোদন, ভ্রমণ, কল্যাণ, আপ্যায়ন, ইনটেরিয়র ডিজাইন, শ্রম, ভূমি, ইমারতসহ স্থায়ী সম্পত্তি, আসবাবকে উপকরণ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আইটেমগুলো প্রকৃতপক্ষে উপকরণ নয়। তাই এগুলোকে উপকরণ থেকে বাদ দেয়া যথাযথ হয়েছে প্রতীয়মান হয়। এতে উপকরণ রেয়াতের যৌক্তিকতা নিশ্চিত হবে। রাজস্বের পরিমাণও বাড়বে। তবে সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য যুক্তিগ্রাহ্য সংজ্ঞা প্রদান সহজ নয় বিবেচনায় অন্যান্য দেশের ভ্যাট আইনের মতো আমাদের আইনে উপকরণের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত না করে (দক্ষিণ আফ্র্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীনের আইনে উপকরণ-এর সংজ্ঞা নেই) যে সর্বক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে না তা রাখা যায়। এতে উপকরণ হিসেবে যুক্তিগ্রাহ্য নয় [যেমন আইনের ধারা (১৮)-এর শর্ত অনুযায়ী ফিনিশড গুডসও উপকরণ] এমন আইটেম উপকরণের অন্তর্ভুক্ত রাখার প্রয়োজন হবে না।

আসবাব মিষ্টান্নভাণ্ডার বর্তমানে সেবা হিসেবে বিবেচিত। আসবাব মিষ্টান্ন বানাতে উপকরণ লাগে এবং দুটিতে পণ্যের বৈশিষ্ট্য (দৃশ্যমান, হস্তান্তরযোগ্য) বিদ্যমান। দুটি সেবাকে পণ্য হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা যুক্তিযুক্ত মনে হয়। পণ্য হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলে হিসাব রক্ষণের বাধ্যবাধকতার কারণে (উপকরণ উৎপাদ সহগ; ক্রয় হিসাব, মূল্য ঘোষণার তারতম্যের ব্যাখ্যা) খাতগুলোতে স্বচ্ছতা রাজস্ব আদায় বাড়বে। সম্ভবত এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এস আরও নং-১৭৬-আইন/২০১৩৬৮০-মূসক তাং ০৬ জুন-এর মাধ্যমে মিষ্টি মিষ্টান্ন এবং আসবাবপত্রকে করযোগ্য পণ্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ওই আইটেম দুটিকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

দৈনন্দিন জীবনের নানামুখী দুশ্চিন্তা-স্ট্রেসকে মোকাবেলা এবং হতাশা, বিষণ্নতা, আত্মহননপ্রবণতাসহ যাবতীয় মনোব্যাধি প্রমোশনে মেডিটেশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের বিনিময়ে মনোদৈহিক রোগগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত এবং নানাবিধ শারীরিক জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীকে অথবা যেকোনো ব্যক্তিকে মেডিটেশন, ধ্যানচর্চা, কাউন্সেলিং, মোহিতকরণ বা অনুরূপ কোনো পদ্ধতিতে মানসিক মনোদৈহিক উত্কর্ষ সাধন বা প্রশান্তি আনয়নের জন্য সেবা প্রদান করাকে মেডিটেশন সেবা বলা হয়। মেডিটেশন সেবার কারণ সরকারের জনস্বাস্থ্য সেবার ওপর চাপ কমবে। সেবার গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার গত কয়েক বছর সেবাকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। জীবনের নানামুখী মানসিক চাপ স্ট্রেস মোকাবেলায় মেডিটেশন সেবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় মেডিটেশন সেবা-কে বছর বছর অব্যাহতির পরিবর্তে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়ে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়।

বর্তমান ভ্যাট আইনে জোগানদার সেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জোগানদার অব্যাহতিপ্রাপ্ত সরবরাহ ব্যতীত অন্য যেকোনো পণ্য বা সেবা কিংবা উভয়ই সরবরাহ করেন এমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা। জোগানদার মূলত পণ্য ক্রয়পূর্বক পণ্যের কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সরবরাহ করেন। ব্যবসায়ীও পণ্য কেনাবেচা করেন। ব্যবসায়ী জোগানদারের কার্যক্রমে তেমন মৌলিক পার্থক্য নেই। পার্থক্য এই যে যোগানদার-কে আইনে সেবা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাপ্লাই চেইনের সব পর্যায়ে অর্থাৎ আমদানি, উৎপাদন ট্রেডিং পর্যায়ে ভ্যাট প্রযোজ্য। তাই জোগানদার নামে আলাদাভাবে সেবা কোডে পণ্য সরবরাহের ওপর ভ্যাট আরোপের পরিবর্তে সাপ্লাই চেইনের সব পর্যায়ে আরোপযোগ্য ভ্যাট আদায়ে আইন-বিধি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ভ্যাট আইন সহজ যুক্তিগ্রাহ্য হবে। বলা সংগত যে জোগানদারের সংজ্ঞায় পণ্য সেবা উভয়ের উল্লেখ থাকলেও জোগানদারের পক্ষে সেবা সংগ্রহপূর্বক তা পুনরায় সরবরাহ করা বাস্তবসম্মত নয়। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। এসআরও দ্বারা ভ্যাটমুক্ত হলেও সেসব পণ্য বা সেবা জোগানদার কর্তৃক সরবরাহ করা হলে তা জোগানদার হিসেবে কর আরোপযোগ্য। ফলে এসআরও দ্বারা ভ্যাটমুক্ত পণ্যের ওপরও শেষ পর্যন্ত ভ্যাট আরোপ হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। তাছাড়া শুধু উেস কর কর্তনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত সত্তা গোগানদার থেকে মূসক কর্তন করবেন। অন্যরা জোগানদার সেবার ওপর কর কর্তনে বাধ্য নন।

বর্তমান আইনে ৩১ ধারা অনুযায়ী আগাম কর আদায় করা হয়। কর বলতে ভ্যাট আইনে মূল্য সংযোজন কর, টার্নওভার কর, সম্পূরক শুল্ক এবং বকেয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে সুদ, জরিমানা অর্থদণ্ডও বুঝায়; শুধু মূসককে বুঝায় না। কিন্তু ৩১ ধারা অনুযায়ী আগাম কর বলতে আমদানি পণ্য সরবরাহের ওপর প্রদেয় ভ্যাট বুঝায়। তাই আগাম কর-কে আগাম মূসক কর দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হলে তা অধিকতর গ্রহণযোগ্য স্পষ্ট হবে।

বর্তমান মূল্য সংযোজন কর আইন বিধিমালায় ব্যবসাবান্ধব অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন। যেমন মূল্য সংযোজন কর বিধি ৪০()-এর দফা (C) অনুযায়ী সরবরাহ মূল্য ২৫ হাজার টাকার অধিক হলে মূল্য সংযোজন কর চালানপত্রে (মূসক .) ক্রেতার ব্যবসা শনাক্তকরণ সংখ্যা থাকাটা বাধ্যতামূলক। বিধানটি বাস্তবভিত্তিক নয়। যাদের ব্যবসা শনাক্তকরণ সংখ্যা নেই, তারা এমনিতেই উপকরণ কর রেয়াত পাবেন না। কিন্তু ব্যবসা শনাক্তকরণ সংখ্যা উল্লেখের শর্ত আরোপ করায় তাদের স্বাভাবিক ক্রয়-বিক্রয় বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিষয়ে সামান্য সংশোধনী প্রয়োজন আছে মনে হয়।

উেস কর কর্তনের ক্ষেত্রে আইনের ধারা ৪৯ এবং বিধি ৪০ ()-এর দফা ()- বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরবরাহগ্রহীতা পণ পরিশোধের পর উেস কর কর্তন সনদপত্র (মূসক-.) জারি করবে উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি স্পষ্টীকরণপূর্বক সরবরাহগ্রহীতা পণ্য পরিশোধের পর উেস কর কর্তন সনদপত্র (মূসক-.) জারি করবে-এর পরিবর্তে উেস কর কর্তন করার পর কর্তনকারী প্রত্যয়নপত্র জারি করবে উল্লেখ করলে সাধারণের জন্য বুঝতে সহজ হবে বলে প্রতীয়মান হয়।

রিভার্স ভ্যাট চার্জ-এর বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন। সাধারণত পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী ভ্যাট পরিশোধের জন্য দায়ী। কিন্তু রিভার্স ভ্যাট চার্জ-এর ক্ষেত্রে সরবরাহকারী এর পরিবর্তে পণ্য বা সেবাগ্রহীতা ভ্যাট পরিশোধের জন্য দায়ী। অর্থাৎ ভ্যাট আরোপ রিভার্স হয়ে যায়।

বাংলাদেশের ভ্যাট আইনের ধারা ২০- আমদানীকৃত সেবার ক্ষেত্রে গ্রহীতার কাছ থেকে কর আদায়ের বিষয়ে বলা হয়েছে। আমদানীকৃত সেবার ক্ষেত্রে (গ্রহীতা কর্তৃক) প্রদেয় কর একই সঙ্গে তার ব্যক্তির আউটপুট ভ্যাট এবং ইনপুট ভ্যাট হওয়ায় এক্ষেত্রে নিবন্ধিত গ্রহীতা প্রকৃত অর্থে মূসক কর্তৃপক্ষকে কোনো কর দিচ্ছেন না। আইনের বিধানটি তা স্পষ্ট করে না। বিষয়টি আরো বোধগম্য করা প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের মূসক আইনের ওই বিধান দেখলে মনে হয়, রিভার্স ভ্যাট চার্জ কেবল সেবা অমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি তা নয়। রিভার্স চার্জ পণ্য এবং সেবা উভয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে, যদিও সেবার ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য এবং এটি আমদানি এবং দেশীয় সরবরাহ দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে। যেমন কোনো অনিবন্ধিত তামাকচাষী কর্তৃক নিবন্ধিত ক্রেতার কাছে তামাকপাতা সরবরাহের ক্ষেত্রে রিভার্স ভ্যাট চার্জ হতে পারে। উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান জিএসটি আইনে কৃষক কর্তৃক নিবন্ধিত ব্যক্তির কাছে কাঁচা তুলা কাজু বাদাম সরবরাহের ক্ষেত্রে রিভার্স চার্জ মেকানিজম প্রযোজ্য। একইভাবে অন্যান্য সেবার মধ্যে পরিবহন এজেন্সি কর্তৃক (যিনি সরকারকে কর পরিশোধ করেননি) ফ্যাক্টরি আইনের আওতায় নিবন্ধিত ফ্যাক্টরির কাছে সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে (ইন্ডিয়ায়) রিভার্স চার্জ প্রযোজ্য। যুক্তরাজ্যে নির্দিষ্টকৃত পণ্য (যেমন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার চিপস) সেবার দেশীয় সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাট রিভার্স চার্জ অনুসরণ করা হয়। ইউরোপিয়ান ভ্যাট সিস্টেমে অ্যান্টি-ফ্রড ব্যবস্থা হিসেবে রিভার্স চার্জ ব্যবহূত হয়।

আমাদের ভ্যাট আইনে কী কী পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে রিভার্স চার্জ মেকানিজম প্রযোজ্য হবে এবং কেন হবে, তা বিধি বা এসআরও দ্বারা স্পষ্টীকরণ বা নির্দিষ্টকরণ করা হলে রিভার্স চার্জ শুধু আইনের বিধানে সীমাবদ্ধ না থেকে রাজস্ব আদায়ে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।

. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ: ভ্যাট বিশ্লেষক প্রশিক্ষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন