নোয়াখালীর কবিরহাট

ব্যবহার অযোগ্য পাঁচ সেতুতে দুর্ভোগ চরমে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নোয়াখালী

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশি খালের ওপর নির্মিত চরএলাহী স্টিলের সেতুর একটি পিয়ার গত ডিসেম্বরে ভেঙে পড়ে। এর পর থেকে প্রায় দুই মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে সেতুটি।

শুধু চরএলাহী সেতুটি নয়। কোম্পানীগঞ্জ কবিরহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ধানশালিকের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চাপরাশি খাল আলগী খালের ওপর নির্মিত আরো চারটি সেতুরও একই অবস্থা। কোনোটির অর্ধেক ভেঙে পড়েছে তিন বছর আগে, কোনোটি পুরোটা ধসে গেলেও এখনো চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে অবশিষ্টাংশ, আবার কোনো কোনোটির দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। চারটি সেতু ধানশালিক ইউনিয়নের অংশে নির্মিত হলেও সীমান্তবর্তী হওয়ায় চরএলাহীর বাসিন্দারাও উপকৃত হচ্ছিলেন। কিন্তু সেতুগুলো ধসে ভেঙে পড়ায় দুই ইউনিয়নে কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বৃহৎ ইউনিয়ন চরএলাহীর লাখো মানুষ উপজেলা সদর দপ্তর, জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম চরএলাহী স্টিলের সেতুটি। এছাড়া সুবর্ণচর উপজেলা সন্দ্বিপ উপজেলার কিছু অংশের মানুষের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় সেতুটির দক্ষিণ অংশের একটি পিয়ার ধসে পড়ে রয়েছে। এতে যানবাহন জনসাধারণের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধসে পড়া উত্তর-দক্ষিণে লম্বা সেতুটির ওপরের স্টিলের পাতগুলোও খুলে উত্তরপাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একটি পিয়ার ধসে নিচে নেমে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত মাসের শেষ দিকে সেতুটির দক্ষিণ পাশের পাশাপাশি একটি পিয়ার নিচের দিকে দেবে কাত হয়ে যাওয়ার পর যানবাহন জনসাধারণের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণে সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ সেতুর ওপরের স্টিলের পাতগুলো খুলে ফেলে।

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দেবে যাওয়া সেতুর স্টিলের পাত খুলে ফেলার কারণে বর্তমানে নৌকাই প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই খাল পারাপারের একমাত্র বাহন। একটি নৌকা একবার উত্তর পাড়ের লোকজনকে দক্ষিণ পাড়ে নিয়ে যায়, আবার দক্ষিণ পাড়ের লোকজনকে উত্তর পাড়ে নিয়ে আসে। সেতুটি বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহনে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরতে হয়।

চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, চরএলাহী স্টিল সেতুটি কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ। কারণ চরএলাহী ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুবর্ণচর উপজেলার বাসিন্দারাও সেতু দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। তাছাড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত ধান, শাকসবজি, মাছসহ নানা কৃষিপণ্য এবং বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের মালপত্র সেতু দিয়েই আনা-নেয়া হতো। এখন সব শ্রেণী-পেশার মানুষই সেতুর কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে আন্তরিক হলেও এখন গড়িমসি করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে, কিন্তু কোনো সুফল আসছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরএলাহী সেতুটি মূলত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ছিল। বছরখানেক আগে সড়কসহ ওই সেতুটি সওজ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বণিক বার্তাকে বলেন, কিছুদিন আগেই এলজিইডি থেকে সড়কসহ সেতুটি আমরা পেয়েছি। সড়ক উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ দিকে। স্টিলের সেতুটির পাশেই নতুন সেতু নির্মাণকাজও চলমান। তার পরও পুরনো স্টিল সেতুটিকে মেরামত করে সাধারণ মানুষের চলাচল উপযোগী করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কৃষক মোহাম্মদ হোসেন জানান, সেতুগুলোর দশার কারণে প্রত্যেক সেতুর অংশে দুই পাড়ের মানুষকে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দিনে কোনোভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করলেও রাতে পড়তে হয় বেশি বিপাকে।

তিনি বলেন, উৎপাদিত ধান, সবজি পারাপারে অধিক মূল্য দিতে হচ্ছে। আর হয়রানির তো আছেই।

দুর্ভোগের ব্যাখা দিতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামে এক বাসিন্দা বলেন, এখন পর্যন্ত বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু রাতে কোনো মুমূর্ষ রোগী বা গর্ভবতীকে নিয়ে যাতায়াত করা শঙ্কাজনক।

ধানশালিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াকুব নবী জানান, সেতুগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গেছেন। তারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। তবে কবে নাগাদ সমস্যার সমাধান হবে তা কেউ বলতে পারেনি।

দুটি খালের ওপর সেতুগুলো ভেঙে যাওয়া ধসে পড়ার বিষয়টি অবগত থাকার কথা জানালেন জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক। তিনি জানান, বিষয়ে একটি প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এর বাস্তবায়ন হবে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন