চালের বাজারে চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে কনটেইনার সংকট

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনা মহামারীর মধ্যে নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক চালের বাজার। একদিকে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, অন্যদিকে সরবরাহ সীমিত হয়ে আসা খাদ্যপণ্যটির বাজার ভারসাম্য বিঘ্নিত করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পণ্যবাহী কনটেইনার কার্গো সংকট, যার কারণে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে চাল রফতানি বিলম্বিত হচ্ছে। আর এসবের প্রভাব পড়েছে চালের দামে। করোনাকালে আকাশ ছুঁয়েছে খাদ্যপণ্যটির দাম। খবর ব্যাংকক পোস্ট এগ্রিমানি।

মহামারী লকডাউনের কারণে গত বছরের মধ্যভাগ থেকে অনেক দেশে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। ভিড়লেও নাবিক সংশ্লিষ্টদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বিলম্বিত হচ্ছে। বাড়ছে ব্যয়। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যবাজারে। চাল পরিবহনের জন্য সময়মতো পণ্যবাহী কনটেইনার কার্গো পাওয়া যাচ্ছে না।

পূর্ব আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সানরাইজ লিমিটেড কেনিয়ায় চাল আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিতাল শাহ বলেন, আগে পাকিস্তান থেকে কেনিয়ায় একেকটি চালবাহী কনটেইনার পরিবহনে ৮৫০-৯০০ ডলার ব্যয় হতো। এখন হাজার ৬৫০ থেকে হাজার ১০০ ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। থেকে চালের বাজারে সংকটের চিত্রটা সুস্পষ্ট হয়।

তিনি আরো বলেন, গত বছরের নভেম্বরে ভারত থেকে আফ্রিকার বন্দরগুলোয় চাল পরিবহনে মাশুল-শুল্কসহ টনপ্রতি ৫০-১৫০ ডলার বাড়তি গুনতে হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমদানি করা চালের দাম টনপ্রতি ৩০০ ডলারের নিচে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। খরচ কমাতে আফ্রিকান আমদানিকারকরা যৌথভাবে আমদানির মাধ্যমে বাড়তি ব্যয়ের লাগাম টানার চেষ্টা করছেন। তাতেও খুব একটা সুফল মেলেনি। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই চাল সংকটে পড়বে আফ্রিকা।

ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে কনটেইনার কার্গো সংকট চরম আকার নিয়েছে। পণ্য খাদ্যসামগ্রীর তুলনায় এখন চিকিৎসা সরঞ্জাম মাস্ক-পিপিই পরিবহনে কার্গোগুলো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এতে চাল রফতানিতে একদিকে যেমন বাড়তি সময় লাগছে, তেমনি বেড়ে গেছে ব্যয়। চালের রফতানি বাজারে দেখা দিয়েছে জট, যা রফতানিযোগ্য চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের (আইজিসি) তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারীর কারণে গত বছর এশিয়ার বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম ২০-৪৫ শতাংশ বেড়েছে। ভারত ভিয়েতনামের বাজারে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। থাইল্যান্ডে খাদ্যপণ্যটি টনপ্রতি ৫০০ ডলারের ওপরে বিক্রি হচ্ছে, যা প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক বাজারে মোটা চিকন দুই ধরনের চালের দামই আগের তুলনায় বেড়েছে।

জাতিসংঘ খাদ্য কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতিবিদ শার্লি মোস্তফা বলেন, মুহূর্তে চালের সরবরাহ সংকটের কোনো কারণ নেই। তবে কনটেইনার সংকট চালের বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরবরাহ শৃঙ্খলে জট লেগে খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়িয়েছে।

ভারতের অন্যতম বৃহত্তম চাল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সত্যম বালাজি। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগরওয়াল বলেন, বৈশ্বিক চালের বাজারে ভারত, থাইল্যান্ড ভিয়েতনাম শীর্ষ রফতানিকারক। দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো তিনটি দেশ থেকে তুলনামূলক সস্তায় চাল আমদানি করে। মহামারীকালে রফতানিকারক দেশগুলোয় চালের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেশি ছিল। এর পরও এসব দেশ খাদ্যপণ্যটির রফতানি দীর্ঘদিন সীমিত কিংবা বন্ধ রাখতে পারেনি। তবে কনটেইনার কার্গো সংকট এখন এসব দেশের চাল রফতানিতে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বাড়িয়ে দিয়েছে চালের দাম।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা চালের বাজারে আরেকটি সংকট হিসেবে দেখা দিতে পারে। আইজিসি বলছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে চালের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২০-২১ মৌসুমে খাদ্যপণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে ৫০ কোটি ২০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। বাড়তি চাহিদার বিপরীতে কনটেইনার সংকট কিংবা অন্য যেকোনো কারণে রফতানি সীমিত হয়ে এলে চালের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। মহামারীকালে এশিয়া-আফ্রিকাজুড়ে বাড়তে পারে খাদ্য সংকটের ঝুঁকি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন