অর্থবছরের প্রথমার্ধের রাজস্ব আহরণ

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১০৬ কোটি টাকা পিছিয়ে বেনাপোল কাস্টমস

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে না বেনাপোল কাস্টম হাউজ। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে কাস্টমস। সময় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ৯৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে হাজার ৮৮৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তবে গত বছরের সময়ের তুলনায় ৩৪২ কোটি টাকার রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছে। সেই হিসাবে সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১২ শতাংশ।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের পরিসংখ্যান শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শামীম হোসেন জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছিল হাজার ৫৪৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে স্থলপথের পাশাপাশি রেলপথেও আমদানি বেড়েছে। এতে করে গত বছরের তুলনায় বছর রাজস্ব ঘাটতি কম হতে পারে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সে সময় রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।

জানা যায়, কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে গেছে। ফলে কোনোভাবেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটটি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল চারটি সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। তবে হাতে গোনা কয়েকজন ধরা পড়লেও অধিকাংশ দুর্নীতিবাজ থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে কোনোভাবে রোধ হচ্ছে না শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি। আর সে কারণে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব ঘাটতি চলছেই।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, করোনাকালে পণ্যের চাহিদা কম থাকায় আমদানি কমে গেছে। বিশেষ করে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমদানি বাড়বে এবং তখন রাজস্বও বাড়বে।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার . নেয়ামুল ইসলাম বলেন, পণ্য চালান খালাসে আগের চেয়ে এখন স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বেড়েছে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা পূরণের।

শুল্ক ফাঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, এটির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। করোনার প্রাদুর্ভাবে গত বছরের মার্চ থেকে আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে আশা করছি, অর্থবছরের শেষে ঘাটতি পুষিয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন