বার্লিন কৃষিমন্ত্রী সম্মেলনের তথ্য

মহামারীতে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বেড়েছে ১৩ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর আগে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬৯ কোটি, শতকরা হিসেবে যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ভাগ। গত এক বছরে আরো ১৩ কোটি ক্ষুধার্ত মুখ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। তাই বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল স্বল্পোন্নত দেশে বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী . মো. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল বিকালে ১৩তম বার্লিন কৃষিমন্ত্রী সম্মেলনে আহ্বান জানান তিনি।

জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (বিএমইএল) পাঁচ দিনব্যাপী (১৮-২২ জানুয়ারি) ১৩তম গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (জিএফএফএ) আয়োজন করে। মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সময়ে কীভাবে বিশ্বকে খাওয়ানো যায় শিরোনামে কৃষিখাদ্য-বিষয়ক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সম্মেলনে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশের কৃষিমন্ত্রী ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।

গত পাঁচদিন বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে যৌথ ইশতেহার (কমিউনিক) প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে প্রধানত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কভিড-১৯ মোকাবেলা করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়টি হলো, ভবিষ্যতে মহামারী থেকে দূরে থাকতে ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ গ্রহণ। শেষটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে . মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সফল হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশের কৃষির উন্নয়ন, এগ্রো-প্রসেসিং, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ফুড ভ্যালু চেইন শক্তিশালী করতে উন্নত দেশগুলোকে বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক কার্যকর সতর্ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত মজুদে মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতেও উন্নত দেশের আরো সহযোগিতা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল দেশের কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু অভিঘাতসহনশীল খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার জুলিয়া ক্লোকনার জানান, করোনাকালে খাদ্য সরবরাহ বাজার স্থিতিশীল থাকলেও অর্থনৈতিক স্থবিরতায় বেকারত্ব আয় হারানোর কারণে নতুন করে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরো বেড়েছে। গত এক বছরে আরো ১৩ কোটি ক্ষুধার্ত মুখ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। ২০২০ সালে পাঁচ বছরের নিচের আরো ৭০ লাখ শিশু চরম অপুষ্টির শিকার হয়েছে।

গত ৩০ বছরে মানুষের নতুন সংক্রমণব্যাধিতে আক্রান্তের ৭০ শতাংশের উৎস প্রাণী। এসব রোগের বিরুদ্ধে সবাইকে দূরে থাকতে হলে ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয়, জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষ, প্রাণী পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি, খাদ্য কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু, কৃষি গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক ইইউ কমিশনার জানুসজ উজসিচোস্কি বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন