চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বাকি আর মাত্র চারদিন। এ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে নগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলছেন প্রার্থীরা। প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ না নিলে নির্বাচনের আগে আরো সংহিসতার আশঙ্কা করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, পোস্টার ছেঁড়ার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব্বের জেরে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। অথচ এ সংঘর্ষের দায় দেয়া হচ্ছে বিএনপিকে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ৫৩টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুজন নিহত হয়েছেন। অভিযোগগুলো তদন্ত করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তথ্যমতে, ১২ জানুয়ারি নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল নামে একজন নিহত হন। ২০ জানুয়ারি বুধবার নগরীর বলিরহাট এলাকায় মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর সমর্থনে গণসংযোগের সময় ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর ওপর হামলায় তিনজন আহত হন। ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর নগরীর পাহাড়তলী কাজির দীঘিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর অফিসে হামলায় তিনজন আহত এবং পাঁচলাইশ শোলকবহর এলাকায় যুবলীগের মিছিলে হামলায় ককটেল সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে গত বুধবার গভীর রাতে নগরীর নাসিমন ভবনের বিএনপির অফিসের সামনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একই দিনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় কাজীর দেউড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বুধবার নগরীর বলিরহাটে মেয়র প্রার্থী রেজাউলের গণসংযোগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর ওপর হামলার ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় যুবদল ও ছাত্রলীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার নগরীর লালখান বাজারে আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাতের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি।
নির্বাচনী সংহিসতা নিয়ে বিএনপির দাবি, গত বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ দলের শীর্ষ নেতা ও কর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এছাড়া বাকলিয়া, পাহাড়তলী ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। গ্রেফতারের আতঙ্কে আছেন নেতাকর্মীরা। এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ও শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনকে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগ দিয়েছেন। এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আট দফা পেশ করেন বিএনপির এ মেয়র প্রার্থী।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা আট দফা দাবি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি। নির্বাচনী প্রচারণায় যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই সাধারণ মানুষ আমাদের আশা দিচ্ছেন। নির্বাচনে বিএনপির গণজোয়ার আমি দেখছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিএনপির গণজোয়ারে ঈর্ষান্বিত হয়ে একের পর এক অভিযোগ করেই যাচ্ছেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। গাড়ি ভাংচুর করা হচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনী সংহিসতা আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। আমাদের বিভিন্ন নির্বাচনী ক্যাম্পে বিএনপির সমর্থকরা হামলা চালাচ্ছে। তারা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে মেনে নিতে পারছে না। আমরা নির্বাচন কমিশনে আমাদের অভিযোগ দিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে কোনো সংহিসতাকে আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় দেয় না।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সংহিসতার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদিন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হলে পুলিশের পদক্ষেপ খুবই জরুরি বিষয়। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে সাধারণ মানুষের ভোটকেন্দ্রে আসা নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না।
