দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের ৩২০তম দিনে গতকাল আরো ১৫ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৮১। টানা ১৪ দিন ধরে দৈনিক মৃত্যু ত্রিশের নিচে রয়েছে। এতে মৃত্যু বিবেচনায় বৈশ্বিক তালিকায় অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশের। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৬১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ শুরু হয় বলে জানান দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ সময় প্রতিদিন গড়ে শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি ছিল। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে দৈনিক শনাক্তের হার কমেছে। সর্বশেষ তিন সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে। চলতি বছরের প্রথম ২০ দিনই দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল হাজারের নিচে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ১৪ দিনে দৈনিক মৃত্যুসংখ্যা ত্রিশের নিচে রয়েছে। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় (করোনাজনিত মৃত্যু) বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৮তম। দেশে করোনা রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু হয়। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৬টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৮টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৫৬টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে ১৪ হাজার ৮৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৬১৯ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৮৯০। গতকাল পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭টি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
গতকাল বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৪৮৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছে। এতে মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬১।
গতকাল মারা যাওয়া করোনা রোগীদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া তিনজন করে নয়জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০, ৪১ থেকে ৫০ ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। এদের মধ্যে আটজন ঢাকা বিভাগের, চারজন চট্টগ্রাম বিভাগের এবং একজন করে তিনজন রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৭ হাজার ৯৮১ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৪৭ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৯৩৪ জন নারী।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিনে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) চীনা কার্যালয়। দ্রুতই এ ভাইরাস এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র দুই মাসে দেড় শতাধিক দেশে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বিশ্ব মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।