ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

অর্থায়ন জটিলতায় শুরু হচ্ছে না নির্মাণকাজ

শামীম রাহমান

কাগজে-কলমে ঢাকায় বর্তমানে দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প চলমান। এর একটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। অন্যটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রথম প্রকল্পটির কাজ এরই মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দৃশ্যমান হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হওয়া ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি সেতু বিভাগ। বাস্তবায়নকাল মাত্র দেড় বছর অবশিষ্ট থাকলেও এখনো অর্থেরই সংস্থান হয়নি। মূলত অর্থের অভাবেই প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

জি টু জি পদ্ধতিতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। তবে একনেকে অনুমোদনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পার হলেও এখনো ব্যাংকটির সঙ্গে ঋণচুক্তিই সম্পন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার।

এক্সপ্রেসওয়েটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। মোট ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা চীনের এক্সিম ব্যাংক হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার জোগান দেবে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে নিয়োগ করে সেতু বিভাগ। সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকায় তাদের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বানিয়ে দেয়ার কথা।

তবে এখনো কাজ শুরু না হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, কাজটি বাস্তবায়ন করতে অন্তত চার বছর সময় প্রয়োজন। যদি চলতি বছরেও কাজ শুরু হয়, তাহলে শেষ করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। অর্থাৎ দুই বছর বেশি সময় লাগবে।

অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, কোনো প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল দেরি হলে তা প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়িয়ে দেয়। উন্নয়ন করার জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়, তাতে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট নামের একটা বিষয় থাকে। সাধারণত কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ১৮ মাস পর থেকে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট শুরু হয়। মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্য, সেবা জনবল বাবদ যে খরচ বাড়ে, তা প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে যত দেরি হবে, মূল্য সমন্বয়ের কারণে ততই বাড়বে বাস্তবায়ন ব্যয়। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটিও সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

মূল ডিপিপি অনুযায়ী, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৭০৪ কোটি টাকা। অনুমোদনের সাড়ে তিন বছর পরও নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায়  ব্যয় আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, চীন সরকারের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। সম্প্রতি চীন সরকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এক্সিম ব্যাংক ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করবে। যেহেতু ঋণ অনুমোদন হয়ে গেছে, এখন ঠিকাদার শুধু ঋণ চুক্তির অপেক্ষা করছেন। এরপরই ঠিকাদার মোবিলাইজেশন কাজ শুরু করবেন। মূলত প্রকল্পের জন্য ঋণ অনুমোদন দেরি হওয়ায় এখনো কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই।

প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের প্রয়োজন হবে কিনাএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন সময় বৃদ্ধির জন্য হলেও তো ডিপিপি সংশোধন করতে হবে। তবে আমরা কাজ শুরু করার চার বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ করার চেষ্টা করব। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রথম দুই-তিন মাস মোবিলাইজেশনের কাজ করতে হবে। এর পরই শুরু হবে মূল কাজ। আমরা বেশকিছু কাজ আগেই করে রেখেছি। জমি অধিগ্রহণ করা হয়ে গেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা তৈরির কাজও প্রায় শেষ। ভৌত কাজ শুরু করার আগে যেসব প্রাথমিক কাজ করতে হয়, সেগুলোর প্রায় সবই শেষ হয়ে গেছে। এসব কাজ ঠিকাদার নিজেদের টাকাতেই করেছেন। যখন ঋণ চুক্তি হবে, তার পরই টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হবে।

সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বিমানবন্দর মোড় পার হয়ে চলমান ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে উড়ালসড়কটি।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সেতু বিভাগ জানিয়েছে, সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ইপিজেড সংলগ্ন শিল্প এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন করবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি ব্যবহার করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ-ছয়টি জেলার মানুষ সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে রফতানি পণ্য পরিবহনেও রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ডিপিপিতে বলা হয়েছে, বাস্তবায়িত হলে ফাইন্যান্সিয়াল আইআরআর এবং ইকোনমিক আইআরআরের পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৩ দশমিক শূন্য শতাংশ ১৩ দশমিক শতাংশ। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক বেনিফিট কস্ট রেশিওর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে দশমিক শূন্য এবং দশমিক ১৩। জিডিপিতে শূন্য  দশমিক ২১৭ শতাংশ প্রভাব ফেলবে উড়ালসড়ক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন