উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

৭০ হাজার গৃহহীন আজ পাবেন মাথা গোঁজার ঠাঁই

তানিম আহমেদ

মুজিব বর্ষে দেশের গৃহহীনদের বাড়ি ভূমিহীনদের জমি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আজ। সারা দেশের প্রায় ৭০ হাজার গৃহহীন পরিবারের হাতে আজ ঘরের চাবি তুলে দেয়া হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। দেশের ৪৯২টি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এতে সরাসরি সংযুক্ত থাকবেন।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া বাড়িতে থাকছে দুটি কক্ষ। এছাড়া প্রতিটি বাড়ির সামনে একটি বারান্দা, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর খোলা জায়গা রয়েছে। পুরো ঘর নির্মাণে ব্যয় লাখ ৭১ হাজার টাকা আসবাবপত্র পরিবহনে দেয়া হবে হাজার টাকা। ঘর রেজিস্ট্রি করা হবে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে। দলিলে দুজনেরই নাম ছবি থাকছে।

প্রথম দিনই আজ ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারকে গৃহের চাবি দেয়া হবে। একই সঙ্গে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনকে গৃহ ভূমিহীনকে ভূমি দেয়ার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন তা পৃথিবীতে বিরল। সরকারিভাবে একসঙ্গে কোনো দেশই এত মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়নি। এজন্য ছয় মাস আগে আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এছাড়াও আগামী এক মাসের মধ্যে আরো এক লাখ পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হবে।

মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে খুশি উপকারভোগীরা। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা বেলুকা বলেন, মানুষের ঘরে ঘরে কাজ করি। রাস্তার ধারে বাস করছি। কখনো মানুষ তাড়ায় দিছে, কখনো ঝড়-বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ে উড়িয়ে নিয়েছে। ভিটেমাটি-ঘর বলতে কিছুই ছিল না।

শেখ হাসিনা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। বাকি জীবন এখানে কাটিয়ে দিতে পারব। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। তার যেন হায়াত বৃদ্ধি পায়, সেই দোয়া করি।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেন, এটি মুজিববর্ষের একটি অসাধারণ ঘটনা। গুগল আপনাদের সবার পকেটেই আছে, দেখতে পারেন; পৃথিবীতে নজির নেই। পৃথিবীতে রকম ঘটনার নজির আছে কিনা জানা নেই, একজন রাষ্ট্রনায়ক বলছেন, আমার দেশের গৃহহীন ভূমিহীন সব মানুষকে গৃহ ভূমি দেব।

তিনি বলেন, অব্যবহূত হাজার ৫৮ একর খাসজমি বিভিন্নভাবে জনকল্যাণে ব্যবহূত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশকিছু অবৈধ দখলদার ছিল, তাদেরও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে দুটো উপকার হয়েছে। দখলদারমুক্ত হয়েছে এবং জনকল্যাণে সরকারি ভূমি ব্যবহার হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের চিন্তা থেকেই এই ঘরের নকশার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি ঘরে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর লম্বা বারান্দা থাকবে। সেটি অনুসরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাড়িগুলোতে আমরা বিদ্যুৎ পানির ব্যবস্থাও করেছি।

আশ্রয়ণ- প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি সারা দুনিয়াতে এটি প্রথম ঘটনা এবং একমাত্র ঘটনা, একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা মূল্যে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করবেন। একই সঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে আরো এক লাখ ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, কার্যক্রমে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে সরাসরি বাজার থেকে ক্রয় করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে ঘর নেই, জমিও নেইএমন পরিবারের সংখ্যা লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ পরিবার এবং ভিটেমাটি আছে, ঘর জরাজীর্ণ কিংবা ঘর নেইএমন পরিবারের সংখ্যা লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবার রয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর অবধি লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন