ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড

আগের শর্তেই কনকর্ডের সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছে রেলওয়ে!

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের ফয় লেকে একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক নির্মাণে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে রেলওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয় ২০০৫ সালে। চুক্তির একাধিক শর্ত ভঙ্গ এবং ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ ব্যয় নিয়ে জটিলতায় ২০১৭ সালে সেটি বাতিল করে রেলওয়ে। রেলওয়ের একতরফা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে কনকর্ড উচ্চ আদালতে গেলে কেটে যায় আরো চার বছর। শেষ পর্যন্ত আগের শর্ত বলবৎ রেখেই কনকর্ডের সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রেলের সঙ্গে কনকর্ডের চুক্তি হয়েছিল ৫০ বছরের। তবে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে মাত্র ১৩ বছরের মধ্যেই চুক্তি হারায় কনকর্ড। রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ফয় লেকের ৩৩৬ দশমিক ৬২ একর জমির ইজারা/লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের পক্ষে তত্কালীন প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজা চুক্তিটি বাতিল করেন ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে কনকর্ড উচ্চ আদালত থেকে রেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ নেয়। পরবর্তী সময়ে আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে গত চার বছর ধরে পর্যটন-সংক্রান্ত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল কনকর্ড। তবে ব্যবসা পরিচালনা করলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন কেন্দ্রটির অবকাঠামোগত পরিবর্তন বিনিয়োগ করতে পারছিল না কনকর্ড। মামলাজনিত কারণে রেলের মাসভিত্তিক মোটা অংকের হিস্যাও পরিশোধ করছিল না প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী চট্টগ্রাম ভ্রমণকালে ফয় লেক নিয়ে কনকর্ডের সঙ্গে রেলওয়ের জটিলতার বিষয়টি জানতে পারেন। বিষয়টি সমাধানে গত ২৬ নভেম্বর সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজাকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি গত ১৫ ডিসেম্বর বৈঠক করে। পরবর্তী সময়ে ২৪ ডিসেম্বর আরো একটি বৈঠকের মাধ্যমে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সাতটি পুরনো শর্ত যথাযথভাবে পরিপালনের শর্তে মামলা প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কনকর্ড চুক্তিপত্রের (এফ) অনুচ্ছেদের শর্তানুযায়ী ২০০ বর্গফুট আয়তনের অফিস ঘর রেলওয়েকে বুঝিয়ে দেবে। অনুচ্ছেদ (আই) অনুযায়ী, লেকের পানি দূষণমুক্ত রাখবে। চুক্তিতে যান্ত্রিক নৌযান পরিচালনার সুযোগ না থাকলেও উভয়পক্ষের ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যান্ত্রিক নৌযান চালানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করবে এবং উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে প্রতি বছর পানির মান পরীক্ষা করবে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের মতামত সাপেক্ষে লেকের পানিতে মাছ চাষ করে আলোচনার মাধ্যমে লভ্যাংশ বণ্টন করা হবে। অনুচ্ছেদ (এইচ) ১৬-এর শর্তানুযায়ী, ভবিষ্যতে রেলওয়ের অনুুমতি ব্যতিরেকে লিজকৃত ভূমির রূপ পরিবর্তন/পরিবর্ধন/রূপান্তর করা যাবে না। চুক্তিপত্রের অনুচ্ছেদ () অনুযায়ী চুক্তীকৃত ভূমির আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষার জন্য কনকর্ডের তৈরি করা সফটওয়্যারের পাসওয়ার্ড অডিট ফার্মের প্রতিবেদনের কপি রেলওয়ে পর্যটন করপোরেশনকে দেয়া হবে। চুক্তিপত্রের ১৩ নং শর্ত অনুযায়ী, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের কথা কনকর্ডের থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ভূমি উন্নয়ন কর দিচ্ছিল না কনকর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে লিজকৃত ভূমির অবৈধ দখল করা অংশের উন্নয়ন কর রেলওয়ে বহন করে অবৈধ দখলীয় জমি কনকর্ডকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও নং শর্তানুযায়ী লিজগ্রহীতা কর্তৃক দাখিলকৃত ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী সব স্থাপনা নির্মাণের আগে রেলওয়ের অনুমতি নেবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে কনকর্ড সব প্রত্যাহারের পাশাপাশি রেলওয়ে চুক্তিপত্র বাতিলের চিঠি প্রত্যাহার করবে।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কংকন চাকমা বণিক বার্তাকে বলেন, কনকর্ডের সঙ্গে ফয় লেক নিয়ে জটিলতা নিরসনে তিনটি পক্ষই কাজ করছে। চুক্তির একাধিক শর্ত পরিপালন না হওয়ায় কোনো পক্ষই লাভবান হচ্ছিল না। রেলওয়ে বর্তমানে সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই ফয় লেকসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে রেলের আয় বৃদ্ধি ছাড়াও প্রাকৃতিক ভূমি যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

ফয় লেক চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে হ্রদটি খনন করা হয়। এর আগে হ্রদটি পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে ইংরেজ রেল প্রকৌশলী ফয়-এর নামে ফয় লেক নাম দেয়া হয় এটির। রেলওয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম রেল কলোনিতে বসবাসকারী কর্মীদের পানি পৌঁছে দিতে লেকটি তৈরি করা হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন