প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা বাড়ি

শরণখোলায় কদম বানুদের উচ্ছ্বাস

তানিম আহমেদ, বাগেরহাট থেকে

সিডর, আইলাসহ ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ম লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের শরণখোলার মানুষদের। প্রকৃতির আঘাতে আশ্রয়হীনদের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। শুধু কি তাই, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে সব সময় নিরাশায় জীবন কাটানো ওই মানুষগুলো এখন উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর সন্তুষ্ট তারা। শরণখোলার ২০০ গৃহ ভূমিহীন পরিবার উঠছে নতুন পাকা ঘরে।

১৫ বছর আগে স্বামীকে হারান শরণখোলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের কদম বানু। স্বামীর মৃত্যুর নয় মাস পর মারা যায় এক বছর বয়সী কন্যাসন্তানও। স্বামীর মৃত্যুর পর পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে খুপরিতে মেলে মাথা গোঁজার ঠিকানা। ২০০৭ সালের ভয়াল সিডরের আঘাতে হারান সেই ঠিকানাটুকুও। পরে অন্যের জমিতে কোনো রকম ছাপড়া ঘরে থাকেন। সর্বশেষ গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে উড়ে যায় শেষ আশ্রয়ও। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পাচ্ছেন পাকা বাড়ি, সঙ্গে স্থায়ী ঠিকানাও।

গতকাল দুপুরে নতুন পাকা বাড়ির সামনে কথা হয় কদম বানুর সঙ্গে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোড় ছোড় মাইয়াপোলা নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। হেরা ডাঙ্গর হবার পর কাম কাজ করে একটা ঘর উঠাইছিলাম। এহনতো শেখ হাসিনা বিল্ডিং দিছে, হেইটাতো কোনো দিনও ভাবি নাই। এতে অনেক খুশি। তার জন্য অনেক দোয়া করি।

পঞ্চাশোর্ধ্ব কালাম হাওলাদার শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোটবেলায় টাইফয়েড জ্বরে চলার শক্তি হারান। বাবার কোনো সম্পত্তি না থাকায় নানার বাড়িতে থাকতেন তারা। বিয়ের পর স্ত্রী পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে বিভিন্ন জনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ২১ বছর ধরে ভায়রার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাপ-দাদার সম্পত্তি না থাকায় বিভিন্ন জনের বাড়িতে থাকি। ২১ বছর ধরে ভায়রার বাড়িতে থাহি। এহন শেখ হাসিনা একটা পাকা বাড়ি দিছেন। সঙ্গে ঠিকানাও দিছেন। যেহানে নিজের ঘরের কথাই ভাবতে পারতাম না, এহন পাকা বাড়ি পামু। আল্লা শেখ হাসিনার হায়াত বাড়ায় দিক।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ২৩ জানুয়ারি দেশের ৬৯ হাজার গৃহহীন ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে সরকার। এদিন বাগেরহাটে ৪৩৩ পরিবার পাচ্ছেন ঘর। এর আওতায় শরণখোলার ১৯৭ ভূমিহীন গৃহহীন পাচ্ছেন তাদের স্থায়ী ঠিকানা। প্রথম ধাপে আগামী শনিবার ৯২টি পরিবার পাকা বাড়িতে উঠবেন। বাকিগুলো নির্মাণধীন।

আশ্রয়ণ- প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে নাসরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এই ২৩ জানুয়ারি সারা দুনিয়ায় এটি প্রথম ঘটনা এবং একমাত্র ঘটনাএকসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে শতাংশ খাসজমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন