ভারত থেকে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা আসছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত থেকে ৩৫ লাখ ডোজ কভিড-১৯-এর টিকা আসছে আজ। এর মধ্যে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে আসবে আরো ১৫ লাখ টিকা। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে আব্দুল মোমেন। এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি দেশে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তথ্য জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে করোনার ২০ লাখ ডোজ টিকা দেবে ভারত। এছাড়া বেসরকারি চুক্তির আওতায় আরো ১৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে কাল (আজ) সব মিলিয়ে কাল (আজ) ৩৫ লাখ টিকা দেশে আসবে। টিকা আসার পর পরই তা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হবে। টিকাদান কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে।

তিনি বলেন, রাশিয়া, চীনসহ আরো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে টিকা দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রাশিয়া অনেক ভ্যাকসিন দিতে চায়। টিকা দিতে আগ্রহীদের মধ্যে চীনও আছে।

এদিকে স্বাস্থ্য সচিব জানান, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসবে। সেখান থেকে নিয়ে টিকা রাখা হবে তেজগাঁওয়ে ইপিআইয়ের স্টোরেজে।

আবদুল মান্নান বলেন, দেশে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা আসার পর প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকদের একজন করে প্রতিনিধিকে টিকা দেয়া হবে। আমরা প্রথম দিন রকম ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছি। আমরা কাজ করছি ২০-২৫ জন কারা হবেন।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে দেশে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হওয়ায় গণটিকাদান শুরু করার আগে সংক্ষিপ্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এরপর টিকা দেয়া হবে সারা দেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

টিকা প্রয়োগ শুরুর দিনক্ষণের বিষয়ে সচিব বলেন, আমাদের একটা সম্ভাব্য দিন ঠিক করা আছে ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি। তবে এটা চূড়ান্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে, এটাই প্রাথমিক পরিকল্পনা।

আবদুল মান্নান বলেন, গত মঙ্গলবার কভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটির বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেনা টিকার প্রথম চালান উপহারের টিকা মিলিয়ে প্রথম মাসে আসবে ৭০ লাখ ডোজ। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ হিসেবে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিকা পাওয়ার পর ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় প্রথমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে টিকা দেয়া হবে।

গণটিকাদান শুরুর আগে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন শুরু হবে। স্বাস্থ্যকর্মীসহ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা সবার আগে টিকা পাবেন। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক একটি বিতরণ তালিকাও এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কারো সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়নি। এছাড়া অন্য কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদনও দেয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন