সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ করোনার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে পেরেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত সরকারি এবং বিরোধী দলের সদস্যের পৃথক প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন তিনি।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে মানুষের জীবন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার ফলে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে। রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

সংসদ নেতা জানান, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনেও তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, চাষের মাছ উৎপাদনে পঞ্চম ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ।

সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দীনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে মানুষের জীবন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার ফলে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।

তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হবে।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারির প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়া চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে কভিডকালে চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে যোগাযোগসহ পত্র প্রেরণ করা হয়। এতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়। তা হচ্ছে চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচ্যুতদের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধসহ ছয় মাসের বেতনভাতা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওই দেশগুলোতে কভিড-১৯ রিকভারি অ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।

আহসানুল হকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজিরবিহীন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তবে শুরু থেকেই আমাদের সরকার সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, যার ফলে পর্যন্ত কভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যুর হার এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

সংরক্ষিত নারী আসনের সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত নদীভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে লাখ ৮৫ হাজার ৫২২টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নে সংসদ নেতা বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য মোট খরচ হবে দুই হাজার ৯৭৮ বিলিয়ন টাকা। ডেল্টা ফান্ডের কাঠামো ফান্ড পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন