মালয়েশিয়ায় চার খাতের কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোর্স কান্ট্রি হিসেবে তালিকাভুক্ত ১৫টি দেশের অনিয়মিত কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া। এজন্য গত জানুয়ারি রিক্যালিব্রেশন (পুনরুদ্ধার) কর্মসূচি চালু করেছে দেশটি, যা চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।  বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সোর্স দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।

মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, চারটি খাতের শ্রমিকরা বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। খাতগুলো হলো নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, বাগান পরিচর্যা কৃষি। রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচির জন্য কোনো এজেন্ট বা ভেন্ডর নিয়োগের প্রয়োজন নেই। শুধু নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি অবৈধ কর্মীদের নামসহ সরাসরি ইমিগ্রেশনে আবেদন করবে। তবে নিজে নিজে ইমিগ্রেশনে গিয়ে বৈধ হওয়া যাবে না। বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবে মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের অনিয়মিত কর্মীরা।

রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচির আওতায় বৈধ হতে নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করে কিছু যোগ্যতা চেয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তাদের নির্ধারিত যোগ্যতা অনুসারে যারা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় এসে ভিসায় উল্লেখিত নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করছেন কিন্তু ভিসা রিনিউ করেননি বা ওভার স্টে হয়েছে তারা প্রক্রিয়ায় বৈধ হতে পারবেন। এছাড়া যারা নিজ কোম্পানিতে কাজ করেননি এবং  নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে গেছেন তারাও বৈধ হতে পারবেন। তবে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যারা এমন অনিয়ম করেছেন, তারাই সুযোগ পাবেন। এর পরবর্তী সময়ে কেউ এসব অপরাধ করলে তারা প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবেন না।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য বলছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া বিদেশী কর্মীর ৪১ শতাংশই বাংলাদেশী। মালয়েশিয়ার প্রায় ৩০ লাখ বিদেশী কর্মীর ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। জরিপে অংশ নেয়া বিদেশী কর্মীর সাড়ে ১২ লাখ অবৈধভাবে সেখানে অবস্থান করছেন। সে হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশী কর্মী অবৈধভাবে রয়েছেন।

এর আগে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ প্রবাসীদের ফেরাতে ব্যাক ফর গুড (বি-ফর-জি) কর্মসূচির আওতায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করে। এর মেয়াদ শেষ হয় ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর। ওই সময় সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া অনেক বাংলাদেশী দেশে ফেরেন। তবে এর পরও দেশটিতে রয়ে যান অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় যারা পরবর্তী সময়ে অবৈধ হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ অবৈধ শ্রমিক মালয়েশিয়ার বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মার্কেটে কাজ করেন।

এদিকে গত বছর (২০২০) আগস্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জরিমানা দিয়ে এসব অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরার সুযোগ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন ছাত্র, পর্যটক ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে অবৈধ হওয়া বিদেশীরা। তবে সুযোগ শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, অন্যান্য দেশের অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিকরাও এর আওতায় ছিলেন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটিতে যান ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর যান প্রায় লাখ ৭৬ হাজার কর্মী। তবে কর্মী রফতানির নামে দুদেশের মধ্যে গড়ে ওঠে একটি চক্র। বাংলাদেশী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির গঠিত ওই চক্র হাতিয়ে নেয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে দেশটিতে গেছেন মাত্র ৫৪৫ জন। পুনরায় কর্মী রফতানি শুরু করতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈঠকেও কোনো ফল আসেনি। যদিও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে রয়েছে কর্মীর চাহিদা, যা প্রতিনিয়তই দখলে নিচ্ছে ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এমনকি চীনের কর্মীরাও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন