‘আমার যা সাজা- দেন, এমন কাজ আর হবে না’

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বাগেরহাট

মধ্যবয়সী গাউস ফকির। দীর্ঘদিন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সম্প্রতি বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তিনি একটি বাঘের চামড়া বিক্রির চেষ্টা করছেন। হাতেনাতে ধরতে ফাঁদ পাতলেন তারা। নিজেরাই ক্রেতা সেজে দর ঠিক করলেন চামড়ার। তারপর হস্তান্তরের সময় হাতে-নাতে আটক।

গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলার রায়েন্দা বাজারস্থ বাসস্টান্ড সংলগ্ন এলাকায় তাকে আটকের সময় বন বিভাগ ও র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় তার কাছ থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়।

আজ বুধবার দুপুরে বাঘের চামড়াসহ আটক গাউস ফকিরকে বাগেরহাট বন বিভাগের অফিসে আনা হলে সবার সামনে তিনি বলেন, ‘আমার যা সাজা হওয়ার তা দেন, আলহামদুল্লিাহ। এমন কাজ আমার দ্বারা আর হবে না। এটা একটা অপরাধ। অরা (বাঘ) মাইর‌্যা ফালাইছে, কীভাবে মারে তা আমি জানি না। আমি সুন্দরবনে ১২-১৩ বছর বনজীবী হিসাবে কাজ করি। অহিদুল নামের একজন আমাকে চামড়া দিয়েছে। আমি অশিক্ষিত গরীব মানুষ, ভুল করে লোভে পড়ে এই চামড়া নিয়েছি। এছাড়া আমি বেশি কিছু জানি না। আমি বুঝলে এরকম কাজ কহনো করতাম না।’

এসময় বন বিভাগের কর্মকর্তা, বনরক্ষি ও র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে বন্যপ্রাণি নিধন আইনে বাঘ হত্যার অপরাধে মামলা দায়ের পূর্বক গাউস ফকির ও চামড়া আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আটক গাউস ফকির শরণখোলা উপজেলার দক্ষিন সাউথখালী এলাকার মৃত রশীদ ফকিরের ছেলে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি গাউস ফকির একটি বাঘের চামড়া বিক্রির চেষ্টা করছেন। ক্রেতা সেজে চামড়াটি ক্রয়ের জন্য গত তিন চার দিন ধরে গাউসের সাথে যোগাযোগ করি। গাউসের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে দর কষাকষি শেষে ১৩ লাখ টাকা চুক্তিতে চামড়াটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী র‌্যাব-৮ এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা নিয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। টাকা দিয়ে চামড়া নেওয়ার সময় হাতে নাতে গাউস ফকিরকে আটক করা হয়।

আটক গাউস ফকির ও জব্দ বাঘের চামড়া আমাদের কার্যালয়ে রয়েছে।বন্য প্রাণি নিধন আইনে বাঘ হত্যার অপরাধে মামলা দায়ের পূর্বক গাউস ফকির ও চামড়া আদালতে সোপর্দ করা হবে।আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চামড়াটির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি গাউস ফকির একজন শিকারি। তিনি এর আগে এ ধরনের কাজ করেছেন কিনা বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তবে ফকির বাড়ির লোকজন এর আগে এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত ছিল বলে জানান তিনি।

কীভাবে বাঘ হত্যা করা হয় এবং বাঘের চামড়া কোথায় যায় এমন প্রশ্নে ডিএফও মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা যতদূর জানি এই দুষ্টু লোকেরা খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে বাঘকে অচেতন করে হত্যা করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তারা বাঘের চামড়াটিকে লোকালয়ে নিয়ে আসেন। এই বাঘের চামড়াগুলো বেশিরভাগ সময় ঢাকার বিভিন্ন এজেন্সির কাছে বিক্রি করা হয়। আসলে তারা দেশের বাইরে পাচার করে অনেক দামে। আবার দেশের মধ্যেও বিক্রি হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন