বাংলাদেশে জুলফার গালফের ব্যবসা কিনে নিচ্ছে রেডিয়েন্ট

বদরুল আলম

২০০৯ সালে আরএকে ফার্মাসিউটিক্যালস প্রাইভেট লিমিটেডকে কিনে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি জুলফার গালফ ফার্মাসিউটিক্যালস। ওই বছর জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড নামে যাত্রা করে তারা। কিন্তু এক যুগ না হতেই এখন বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে জুলফার। তাদের ব্যবসাটি কিনে নিচ্ছে স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেডকে অধিগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেডের অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হওয়ার পথে। -সংক্রান্ত সবকিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।  রেডিয়েন্ট জুলফার বাংলাদেশের শেয়ার কিনে নিলেও এটি পরিচালিত হবে পৃথকভাবে।

দেশের বাজারে ওষুধ বিক্রির পরিমাণ বিবেচনায় শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো রেডিয়েন্ট। স্থানীয় আন্তর্জাতিক দুই বাজারের জন্যই পণ্য উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬০৯ কোটি টাকা। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রির পরিমাণ ৮৬১ কোটি টাকা।

রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বণিক বার্তাকে বলেন, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ফাস্ট এক্সপান্ডিং কোম্পানি। গত আট-দশ বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধিও ভালো হয়েছে। আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটিজ মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মী (ফিল্ড ফোর্স) খুঁজছিলাম। এই খোঁজখবর করার সময় জুলফারের বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলো। তারা জানাল যে তারা তাদের শেয়ার ছেড়ে দিতে চায়। আমরা দেখলাম যে জুলফারের ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি বেশ ভালো এবং আমাদের সঙ্গে মানানসই। কিছু কিছু ফ্যাসিলিটি যেটা আমাদের প্লান্টেও নেই। তাদের অ্যান্টিক্যান্সার এবং ভাইরোলজি পণ্যের মিক্সও আছে, যেগুলো এরই মধ্যে বাজারেও আছে।

প্রতিষ্ঠানটির ফিল্ড ফোর্সও ভালো জানিয়ে মো. নাসের শাহরিয়ার বলেন, সবকিছু বিবেচনায় মনে হলো যে অধিগ্রহণ করলে আমাদের টেকনিক্যাল ফ্যাসিলিটিও কমপ্লিমেন্ট করা হয়, পাশাপাশি তাদের ফিল্ড ফোর্সের সমন্বয়ে বাজারে আমাদের কৌশলগত অবস্থানও শক্তিশালী হয়। জুলফার কেনার জন্য আমরাসহ স্থানীয় আরো দুই-চারটি কোম্পানির পাশাপাশি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানও আগ্রহী ছিল। সার্বিক দিক বিচার-বিশ্লেষণে আমরা একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারলাম। যার অংশ হিসেবে আমরা অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করি এবং গত ১৫ জুলাই থেকে আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। অংশীদারদের মধ্যকার অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার কিছু নিয়মনীতি আছে, যা অনুসরণ করা হচ্ছে। ক্লিয়ারেন্স পেলেই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলতে পারব। নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের কারণে অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখ করা সম্ভব না।

জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানা গাজীপুরে অবস্থিত। লাখ ২৮ হাজার ৭০৫ বর্গফুট এলাকায় গড়ে ওঠা কারখানাটি ১০০টিরও বেশি ওষুধ পণ্য উৎপাদন করত। এসব পণ্যের মধ্যে আছে অ্যান্টিবায়োটিক/ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস, অ্যান্টি-আলসারেন্টস, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভওরাল অ্যান্টি-ডায়াবেটিকস, ডার্মাটোলজিক্যাল এবং নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্টস। শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিক্রির পাশাপাশি সাতটি দেশে পণ্য সরবরাহ করত জুলফার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবসা ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত ভালো চলছিল। ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন সেলিম সোলায়মান। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা পরিচালনায় বহুজাতিক চর্চায় ভাটা পড়ে। এক পর্যায়ে লোকসানে পড়ে জুলফার বাংলাদেশ লিমিটেড। পাশাপাশি অন্য সব বহুজাতিকের মতো দেশে প্রচলিত ব্যবসার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল তাদের। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রচলিত চর্চা অনুযায়ী তারা চিকিৎসকদের উপহার উেকাচ প্রদান কার্যক্রমে ব্যাপক হারে যেতে পারছিল না। যার প্রভাবে বাংলাদেশের মুনাফা বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয় জুলফার বাংলাদেশ।

জুলফার বাংলাদেশের সাবেক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, সেলিম সোলায়মানের ব্যক্তিগত দুর্নীতির প্রভাব পড়তে শুরু করে গোটা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে। এক পর্যায়ে জুলফার গালফ বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। ব্যবসা গোটানোর কার্যক্রমটি এখনো শেষ হয়নি। কিছু শেয়ার বিক্রি বাকি আছে। বাংলাদেশে জুলফারের বিনিয়োগের পরিমাণ আনুমানিক দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন