কভিড-১৯ মহামারী বৈশ্বিক টেলিকম খাতের রাজস্বে বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি করেছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট মহামারী ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনে টেলিকম সেবার চাহিদা বাড়লেও রাজস্বে ভাটা পড়েছে। অ্যানালাইসিস ম্যাসনের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহামারীর প্রাদুর্ভাবে গত বছর বৈশ্বিক টেলিকম খাতের রাজস্ব ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার কমেছে। খবর কনসালট্যান্সি ডটইউকে।
চলতি বছর বৈশ্বিক টেলিকম খাতের রাজস্বে কিছুটা প্রবৃদ্ধির দেখা মিলবে। চলমান মহামারীর কারণে সংযোগ এবং রিমোট ওয়ার্কের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। এর সুবাদে ২০২৩ সাল নাগাদ বৈশ্বিক টেলিকম খাতের রাজস্ব কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগের অবস্থায় ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরজুড়েই বিশ্ববাসী ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হয়েছে। যে কারণে রোমিং, প্রি-পেইড এবং ভয়েসসহ বিভিন্ন সেগমেন্টে টেলিকম খাতের রাজস্ব কমেছে।
২০২০ সাল বিশ্ববাসী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংকটের সামনে দাঁড় করিয়েছে। ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির সঙ্গে সংযুক্ত থাকা, বিনোদন ও শিক্ষার নতুন মাধ্যম খোঁজা এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার জন্য টেলিকম সেবা, প্রযুক্তি, মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবন কতটা জরুরি ছিল, তা প্রত্যেকে পরখ করেছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে টেলিকম সংযোগের চাহিদা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য সেগমেন্টে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা খুব একটা ভালো পর্যায়ে ছিল না।
অ্যানালাইসিস ম্যাসনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত বছর বৈশ্বিক টেলিকম খাত যে পরিমাণ রাজস্ব খুইয়েছে তার এক-তৃতীয়াংশ চলতি বছর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। তবে বিশ্বজুড়ে টেলিকম অপারেটরগুলোর ওপর বিদ্যমান চাপ কমবে না।
এ বিষয়ে অ্যানালাইসিস ম্যাসনের কনজিউমার সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক স্টিফেন সেল বলেন, আগামী এপ্রিল থেকে অনেক অপারেটরকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির প্রতিবেদন দিতে দেখা যাবে। তবে আগামী তিন বছরের আগে সম্পূর্ণরূপে রাজস্ব ঘাটতির মুখ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না।
বিশ্বজুড়ে এখন ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ টেলিযোগাযোগ বাজারগুলোয় ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। আগামী এক দশকে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ফাইভজির বাজারের আকার ৩১ লাখ কোটি (৩১ ট্রিলিয়ন) ডলারে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা টেলিকম অপারেটরগুলোর জন্য নতুন ব্যবসায় সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সুইডেনভিত্তিক টেলিযোগাযোগ গিয়ার নির্মাতা এরিকসনের দাবি, আগামী এক দশকে শুধু কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার্স (সিএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ফাইভজির বাজারের আকার প্রবৃদ্ধি ঘটবে। কভিড-১৯ মহামারীর বিপর্যয় নেমে এসেছে শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রফতানি থেকে শুরু করে ভোক্তা চাহিদায়। এর বিপরীতে কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে টেলিকম খাত। চলতি বছর গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত টেলিযোগাযোগ খাতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান রাজস্ব প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে। তবে ফাইভজির বিস্তার কিছুটা বিলম্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এরিকসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী এক দশকে ডিজিটাল সার্ভিস ব্যবসা বিভাগ এককভাবে সিএসপিগুলোর জন্য ১৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের রাজস্ব আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। ফাইভজি সংশ্লিষ্ট সেবা ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিজিটাল সার্ভিস ব্যবসায় উল্লম্ফন দেখা যাবে। ডিজিটাল সার্ভিস ব্যবসা বিভাগ থেকে সিএসপিগুলোর আসা মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ আসবে ভিডিও, অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর), ভার্চুয়াল
রিয়ালিটি (ভিআর) এবং ফাইভজি নেটওয়ার্কের আওতায় ক্লাউড গেমিংয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়।
বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকম খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে। কিন্তু ২০২২ সালের আগে এ অঞ্চলের টেলিকম খাতের প্রবৃদ্ধিতে খুব একটা উল্লম্ফন দেখা যাবে না। তবে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট চলমান কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এ অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ খাতের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যে কারণে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল বা কিছুটা কমলেও অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।